শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দিতে পারবেন এমদাদুল

মো. এমদাদুল হক
মো. এমদাদুল হক
>

• বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন
• সুপারিশ অনুযায়ী, মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে
• এখন নতুন করে পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে
• কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে সন্তুষ্ট নন প্রার্থী এমদাদুল হক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পাওয়া প্রার্থী এমদাদুল হককে অংশ নিতে বাধা দেওয়া ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন এই পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নিতে হবে। এতে এমদাদুল হকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদনে জমা দেন কমিটির আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন আহম্মদ। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এখন নতুন করে সময়সূচি ঘোষণা করা হবে। তবে প্রতিবেদন নিয়ে সন্তুষ্ট নন প্রার্থী এমদাদুল হক।

এ ঘটনা নিয়ে গত ১ এপ্রিল প্রথম আলোয় ‘নিয়োগ আটকাতে স্বর্ণপদক পাওয়া প্রার্থীকে অপহরণ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গত ২৭ মার্চ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দুই প্রভাষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়ার সময় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে থেকে এমদাদুল হককে ‘অপহরণ’ করেন ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী। দিনভর আটকে রেখে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। পরে ‘শিবির কর্মী’ আখ্যা দিয়ে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় এমদাদুল হক গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করেন। এ ছাড়া পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার জন্য উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর কাছে লিখিত আবেদনও করেন। পাশাপাশি আবেদনপত্রে তিনি সাতজন জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেন। পরে উপাচার্য গত ৩ এপ্রিল তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এ ছাড়া এমদাদুলের আবেদন ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে উপাচার্যকে গত ১৮ এপ্রিল নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ওই বিভাগে যে পদের (প্রভাষক) বিপরীতে এমদাদুল আবেদন করেছিলেন, সে পদে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. এমদাদুল হক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলে কয়েকজন শিক্ষার্থী বাধা দেন। তাঁরা হচ্ছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের আসিফ মাহমুদ শুভ, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের আনোয়ার হোসেন ও মোকসেদ আলী।

তবে এই ঘটনায় ‘নেতৃত্ব’ দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক শরীফ উদ্দিনের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে জানান কমিটির আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন আহম্মদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে শরীফসহ বাকি চারজনকে দেখা যায়নি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, শিক্ষক নিয়োগের ওই মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করেছেন উপাচার্য। এখন নতুন করে আবার পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতে এমদাদুলসহ বাকি পরীক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবেন।

তবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নন বলে জানান শিক্ষক নিয়োগে আবেদনকারী মো. এমদাদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের মধ্যে তিনজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে কেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, সেটি বোধগম্য নয়। অথচ শরীফ উদ্দিন নিজেই প্রথম আলোতে এই ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন।

এমদাদুল হক বলেন, ‘তদন্ত কমিটি আমার সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি। এখন পুনরায় তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য আবেদন করব।’