সাম্যর গানে মুগ্ধ সবাই

লিউনা তাসনিম সাম্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এই মেয়ে এখন বেশ পরিচিত মুখ। সে তার মায়াবী কণ্ঠের গান দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে চলছে। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর আজমত আলী ও আরজুমান্দ মুশতারী দম্পতির মেয়ে সাম্য। এত অল্প বয়সেই সাম্য প্রায় ৭০টি গান মুখস্থ করে ফেলেছে। লালনগীতি, লোকগীতি, নজরুলগীতিসহ প্রায় সব ধরনের গান গায় সে।

সরকারি কোয়ার্টারে থাকার সুবাদে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামিম আল ইয়ামীনের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে লহরী লিলিথের সঙ্গে খেলে ও একসঙ্গে গান শেখে সাম্য। তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে সম্প্রতি সেই গান ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করেন ইউএনও তামিম আল ইয়ামীন। অতঃপর বিভিন্ন জন ভিডিওটি শেয়ার করতে থাকলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। ওই ভিডিওতে ‘মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর’ শিরোনামে একটি নজরুলগীতি গাইতে দেখা যায় সাম্যকে। গানটি গাওয়ার সময় হাত দিয়ে যেন কিছু একটা করছিলে? এমন প্রশ্ন করতেই লিউনা তাসনিম সাম্যের ঝটপট জবাব, ‘আমি তখন আম কাটছিলাম, আর গান গাচ্ছিলাম।’

অনলাইনে ভাইরাল হওয়া খুদে সংগীতশিল্পী লিউনা তাসনিম সাম্য। কারওয়ান বাজার, প্রথম আলো কার্যালয়, ঢাকা, ৬ মে। ছবি: আবদুস সালাম
অনলাইনে ভাইরাল হওয়া খুদে সংগীতশিল্পী লিউনা তাসনিম সাম্য। কারওয়ান বাজার, প্রথম আলো কার্যালয়, ঢাকা, ৬ মে। ছবি: আবদুস সালাম

সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে সাম্য গান ধরে, তখন প্রথম আলো অনলাইনের কর্মীরা তা উপভোগ করেন। বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে গান শেখে সে। তার বাবা আজমত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়ে মূলত নৃত্যশিল্পী হিসেবেই পরিচিত। ছোট থেকেই মঞ্চে নাচে সে। নাচ শেখেও। তবে হঠাৎই সে নাচের চেয়ে গানের দিকে বেশি ঝুঁকে যায়। বর্তমানে ফেসবুকে জানাজানির সুবাদে উৎসাহটা আরও বেড়েছে।’ তিনি বারবার বলছিলেন, তাঁর মেয়ে ভালো গায় তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সাম্যের আজকের যে পরিচিত বা গানের প্রতি যে উৎসাহ, এর পেছনে পুরো অবদান ইউএনও তামিম ও তাঁর স্ত্রীর। বাসায় যে শিক্ষকের কাছে সাম্য গান শেখে, সেই শিক্ষকের বেতনও তাঁরাই দেন।

সাম্য ২৮ নম্বর উত্তর মেলান্দহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। গানের পাশাপাশি সে ভালো নাচে, আঁকে ও কবিতা আবৃত্তি করে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জনের পুরস্কারও আছে তার। মা আরজুমান্দ মুশতারী জানিয়ে দিলেন, মেয়ে পড়াশোনাতেও ভালো। অন্য বাচ্চাদের মতো সে ততটা দুষ্টু না।

লিউনা তাসনিম সাম্য। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ৬ মে। ছবি: আবদুস সালাম
লিউনা তাসনিম সাম্য। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ৬ মে। ছবি: আবদুস সালাম

খুদে এই সংগীতশিল্পীর গানে হাতেখড়ি হয়েছে ওস্তাদ মোহাম্মদ রফিকের কাছে। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমি, উত্তরণ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিক্ষকসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে গান শিখেছে সে। সাম্যের মা-বাবাও গান গাইতে পারেন, গান শুনতে পছন্দ করেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে তানজীন মাহমুদও গান গায়। ছেলে এবার এসএসসি পাস করেছে। পড়াশোনার চাপে এখন আর সেভাবে গানের পেছনে সময় দিতে চায় না। তাই মা-বাবা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন সাম্য যাতে গানের সঙ্গে লেগে থাকে।

মেয়েকে নিয়ে মা-বাবার কথা ফুরাচ্ছিল না। বললেন, তাঁদের সাম্যকে দেখেই এখন অন্য বাচ্চারাও গান শিখতে আগ্রহী হচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাম্যর গান শোনার জন্যই শ্রোতারা বসে থাকেন। একটি গাওয়া শেষ হলে অন্য গান গাওয়ার অনুরোধ করেন। মোটকথা, সাম্য যেখানেই যায়, সেখানেই গান গাওয়ার অনুরোধ পেতে থাকে।

বাবা-মায়ের সঙ্গে লিউনা তাসনিম সাম্য। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ৬ মে। ছবি: আবদুস সালাম
বাবা-মায়ের সঙ্গে লিউনা তাসনিম সাম্য। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ৬ মে। ছবি: আবদুস সালাম

বাবা আজমত আলী বললেন, এলাকার রিকশাচালক থেকে শুরু করে প্রায় সবাই চেনেন তাঁদের মেয়েকে। মেয়ের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তা সবাই খেয়াল রাখেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ফারুক মিয়া থেকে শুরু করে অন্য কর্মকর্তারাও খেয়াল রাখেন। সবাই চান সাম্য শিল্পী হিসেবে সুনাম অর্জন করুক।

বড় হয়ে কী হতে চায়? জানতে চাওয়া হলে সাম্য জানায়, সে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। সেই সঙ্গে গানটাও চালিয়ে যেতে চায়। এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম সাম্যর সাক্ষাৎকার নিচ্ছে, সবাই তার প্রশংসা করছে। বেশি প্রশংসা পেয়ে মেয়ে যাতে উচ্ছন্নে না যায়, সে দিকে সজাগ সাম্যর মা-বাবা। সাম্যের শিক্ষকেরাও জানিয়ে দিয়েছেন, প্রচারের জন্য মেয়েকে যাতে যেখানে সেখানে গান গাইতে না পাঠানো হয়।