একটি নতুন পাখি পেল দেশ

খয়রা লেজ চুটকি।  ছবি: নাঈম ইসলাম
খয়রা লেজ চুটকি। ছবি: নাঈম ইসলাম

নতুন নতুন পাখির ছবি তোলার নেশা নাঈম ইসলামের। সপ্তাহে অন্তত তিন-চার দিন বাঁশঝাড়ে যান পাখির খোঁজে। গত ১৯ এপ্রিলও গিয়েছিলেন। একটা ছোট পাখি দেখে ক্যামেরা তুলে পাঁচটা ক্লিক করলেন। কোনো ‘কমন’ পাখি ভেবে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু ২১ এপ্রিল সকালে জেনেছেন, তিনি একটি নতুন রেকর্ড করেছেন। বাংলাদেশে এই পাখি তিনিই প্রথম দেখেছেন।

বাংলা নাম নেই এ পাখির। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেছেন, এর বাংলা নাম হতে পারে ‘খয়রা লেজ চুটকি’।

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নাঈম ইসলাম। থাকেন বগুড়ার শেরপুরে। শখে পাখির ছবি তোলেন। বগুড়া বার্ড ক্লাবের সদস্য হয়েছেন। তাঁর ক্যামেরাতেই ধরা পড়ল খয়রা লেজ চুটকি।

বাঁশঝাড়টি বগুড়ার শাজাহানপুরে। প্রতিদিনের মতো নাঈম ইসলামের সঙ্গী স্থানীয় আলোকচিত্রী কাইয়ুম খাজা। জায়গাটা নাঈমের বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। চেয়েছিলেন ‘থাই ইন্ডিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার’ পাখির ছবি তুলতে। বগুড়া বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদ পারভেজ তাঁকে ফোন করে বলেছেন ‘প্যারাডাইস’ পেলে যেন ফোন দেন। তিনি পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়াকে নিয়ে ছবি তুলতে আসবেন। নাঈম প্যারাডাইস আর ফ্লাইক্যাচারের দেখা পেলেন। ফ্লাইক্যাচারের বাংলা নাম চুটকি। বাংলাদেশে ২০ থেকে ৩০ ধরনের চুটকি দেখা যায়। তাই সাধারণ কোনো ফ্লাইক্যাচার ভেবে তিনি পাঁচটা ক্লিক করেই প্যারাডাইস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কাইয়ুম খাজাও করলেন একটা ক্লিক।

প্যারাডাইসের খবর পেয়ে তৌহিদ পারভেজ পুলিশ সুপারসহ আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। সবাই মিলে প্যারাডাইসের ছবি তোলেন। কিন্তু কমন কোনো ফ্লাইক্যাচার ভেবে যে পাখিটির ছবি নাঈম ইসলাম তুলেছিলেন, ক্যামেরায় দেখে ওই পাখির পরিচয় কেউ নিশ্চিত করতে পারলেন না।

রাতে বাসায় ফিরে ফেসবুকে ছবি দিয়ে পাখিটার পরিচয় জানতে চান নাঈম। রোববার সকালে তাঁর ফেসবুকের ইনবক্সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘অভিনন্দন। “রাস্টি টেইলড ফ্লাইক্যাচার” বাংলাদেশে নতুন পাখি।’

ফেসবুকের ছবি দেখে তার আগের দিনই বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহসভাপতি সায়েম চৌধুরী বগুড়ায় ছুটে আসেন।

২২ এপ্রিল প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হককে পাখির ছবিটি পাঠানো হয়। তিনি ছবি দেখে বলেন, ‘রাস্টি টেইলড ফ্লাইক্যাচার বাংলাদেশে এর আগে দেখা যায়নি। এই পাখি বাংলাদেশে আসাটা বড় বিচিত্র ব্যাপার। এরা শীত কাটায় দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে আর মে মাসের দিকে গ্রীষ্ম কাটাতে চলে যায় হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে। এদের যাওয়ার পথে বাংলাদেশ পড়ে না। বাংলাদেশ আরও অনেক পূর্বে। সুতরাং একে বাংলাদেশে দেখা গেছে, এটা এই পাখির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। একে যদি বাংলাদেশে বারবার দেখা যায়, তাহলে বলতে হবে, পাখির জগতে এটা নতুন তথ্য। পাখিটির বিচরণক্ষেত্র সম্পর্কে আমাদের আরও জানার আছে।’

ইনাম আল হক বলেন, ‘এরা সবাই আমাদের অতিথি। শীত শেষে চলে যায়। আবার এদের অনেকেই এ দেশে বছরের আট মাস পর্যন্ত থাকে। শুধু ডিম দেওয়ার সময় চলে যায়। এদের সবচেয়ে কাছের ডিম দেওয়ার জায়গা হচ্ছে হিমালয়। এর চেয়ে যারা একটু দূরে যেতে চায়, তারা মঙ্গোলিয়া ও সাইবেরিয়ায় যায়।’