পক্বতা পেল না গবেষণার একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি

আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম নিয়ে গবেষণা করা দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (আম গবেষণা কেন্দ্র) ৩৪ বছরেও শুরু করতে পারেনি যুগোপযোগী গবেষণা। গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে নেই যেমন বিজ্ঞানী, তেমনি নেই আধুনিক গবেষণাগারও। আর এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে গবেষণা কার্যক্রম।

কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদ, কীটতত্ত্ববিদ, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী, সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানীসহ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সংকট নিয়েই বছরের পর বছর ধরে চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের (বারি) অধীন বাংলাদেশে এটাই একমাত্র আম গবেষণা কেন্দ্র। অথচ ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সংকট চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুরুতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্র নাম নিয়ে যাত্রা শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির। পাঁচ বছর পর ১৯৯০ সালে এটিকে আরও শক্তিশালী এবং গবেষণার পরিধি আরও বাড়ানোর কথা বলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এটিকে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রে রূপদান করেন। অর্থাৎ আমের পাশাপাশি এখানে অন্যান্য ফল, ফুল ও সবজি নিয়েও হবে গবেষণা। বাড়ানো হবে সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু কথা রাখেনি বারি। সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। প্রতিষ্ঠানটি শক্তিশালী হয়নি। আম নিয়ে গবেষণাই ঠিকমতো হচ্ছে না। অপর দিকে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সংখ্যা আরও কমানো হয়েছে। আগে রাজস্ব ও প্রকল্প খাত মিলিয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদ ছিল ১৯টি। এখন কেবল রাজস্ব খাতে পদের সংখ্যা ১০।

শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে আরও জানান, ১০ জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদের মধ্যে রয়েছে মাত্র ৪ জন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদে অল্প কিছুদিন করে দু-একজন ছিলেন। বাকি দীর্ঘকাল চলছে ভারপ্রাপ্তদের দিয়েই। যে চারজন বিজ্ঞানী রয়েছেন, তাঁরা সবাই উদ্যানতত্ত্ববিদ। কীটতত্ত্ববিদ, রোগতত্ত্ববিদ, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী এবং সংগ্রহোত্তর না থাকায় গবেষণা কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চলছে না। এ ছাড়া গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণাগারগুলোতে অভাব রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির। আমের উপাদান মাপার যে রাসায়নিক পরীক্ষা, তার নেই কোনো যন্ত্রপাতি। কীটতত্ত্ব গবেষণাগারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। রোগতত্ত্ব গবেষণাগার কোনোমতে চললেও আরও উন্নত যন্ত্রপাতি দরকার।

শিবগঞ্জ ম্যাঙ্গো প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, গত তিন বছর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নতুন রোগ দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে মিজ পোকা নামে একধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দিচ্ছে। কিন্তু আম গবেষণা কেন্দ্র থেকে এ ব্যাপারে কোনো পরামর্শ পাওয়া যায়নি। আম গবেষণা কেন্দ্রে রোগতত্ত্ববিদ ও কীটতত্ত্ববিদ না থাকায় এসব ক্ষেত্রে গবেষণা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা গবেষণা কেন্দ্রটিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের শূন্যপদ পূরণের পাশাপাশি গবেষণাগারগুলোকে আধুনিক করার দাবি জানাই। এ ছাড়া আম উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় যেসব দেশ এগিয়ে রয়েছে, সেসব দেশে এ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে পাঠানো দরকার বলেও মনে করি।’