অন অ্যারাইভাল ভিসা ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

বোমার বিস্ফোরণে একটি গির্জার ভেতরের বিধ্বস্ত অবস্থা। ছবি: টুইটার
বোমার বিস্ফোরণে একটি গির্জার ভেতরের বিধ্বস্ত অবস্থা। ছবি: টুইটার

শ্রীলঙ্কায় অন অ্যারাইভাল বা আগমন-পরবর্তী ভিসার সুযোগের অপব্যবহার করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বাংলাদেশের নাগরিকদের নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, দেশটিতে শ্রমিকের চাহিদাকে পুঁজি করে বাংলাদেশের ভাগ্যান্বেষী লোকজনকে যেনতেন ভাবে দেশটিতে পাঠাচ্ছে একটি মহল। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য শ্রীলঙ্কায় অন অ্যারাইভাল ভিসা ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে।

কলম্বো থেকে গতকাল সোমবার ঢাকায় পাঠানো বার্তায় এ সতর্কতার কথা জানানো হয়েছে। গত রোববার কলম্বোর কাছাকাছি মুলেরিইয়াওয়াতে তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর নতুন করে এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার কথা বলে জানা গেছে, জীবনের চাকা ঘোরাতে মাস চারেক আগে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন আরাজ মণ্ডল, রিয়াদ হোসেন ও শাহীন। ভাগ্যবদল তো দূরের কথা, প্রবঞ্চনার শিকার তিন তরুণের ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। টাঙ্গাইল ও শরীয়তপুরের ওই তিন তরুণ তাঁতের কাজ করতেন। তাঁরা প্রত্যেকে প্রায় দুই লাখ টাকা দিয়ে শ্রীলঙ্কা যান। যাওয়ার আগে দালাল তাঁদের প্রতি মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ হাজার টাকা আয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মুলেরিইয়াওয়ার একটি বেকারিতে রুটি ও বিস্কুট বানানোর কাজে যোগ দিয়ে প্রথম মাসে ২০ হাজার টাকা করে বেতন পান তাঁরা। পরের মাসে পান ১২ হাজার টাকা। চলতি মাসের শুরুতে ওই বেতনে আর চাকরিতে থাকতে চাইছিলেন না তিন তরুণ। তাঁরা দেশে ফিরতে মালিকের কাছে পাসপোর্ট ফেরত চান। মালিক তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ তাঁদের পাসপোর্টে দেখতে পেয়েছে, তাঁরা পর্যটক ভিসায় শ্রীলঙ্কায় আছেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় কাজ করার আনুষ্ঠানিক কোনো অনুমতিপত্র নেই কারোর।

জানতে চাইলে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের তিনজনকে সোমবার আদালতে হাজির করা হলে কয়েক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আটক তিনজনের পারিবারিক বৃত্তান্ত, তাঁরা কবে শ্রীলঙ্কায় গেলেন, তাঁরা বাংলাদেশে কী করতেন, এ নিয়ে সেখানকার কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোসহ কয়েকটি স্থানে ইস্টার সানডেতে জঙ্গি হামলার পর বিদেশিদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা শুরু হয়েছে। শ্রীলঙ্কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাজিরা অভয়ওয়ার্দেনা সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০০ ইমামসহ শ্রীলঙ্কা থেকে অন্তত ৬০০ বিদেশিকে তাঁদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও মালদ্বীপের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকও রয়েছেন।

জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার নির্মাণশিল্পে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এটি একটি সুযোগ। কিন্তু অন অ্যারাইভাল ভিসার অপব্যবহার করে দালালেরা লোকজনকে পাঠিয়ে সে সম্ভাবনা নষ্ট করতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া গত মাসের জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশের লোকজন গ্রেপ্তারের পর তাদের ‘সম্ভাব্য জঙ্গি সম্পৃক্ততার’ বিষয়টিও উদ্বেগের। এ প্রসঙ্গে তারা ২০১৫-১৬ সালে সিঙ্গাপুরে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বাংলাদেশের নাগরিকদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে ওই সময় বাংলাদেশিদের আটকের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে বাংলাদেশের লোকজন নিয়োগের ব্যাপারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। আর সেখানকার নিরাপত্তা এলাকাগুলোতে একেবারেই বন্ধ করা হয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কাজের অনুমোদনপত্র।

প্রায় দেড় যুগ আগে অন অ্যারাইভাল ভিসার সুযোগের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে মালদ্বীপের প্রসঙ্গটি আনছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা। ওই সময় শিথিল ভিসা-ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির দালাল বিদেশগামী বাংলাদেশের লোকজনকে মালদ্বীপ যেতে প্রলুব্ধ করতেন।