আশীর্বাদ হয়ে এল 'ফণী'

মায়ের কোলে ফণী আক্তার।  ছবি: সংগৃহীত
মায়ের কোলে ফণী আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

অন্য আর দশটা দিনের মতো গত শুক্রবার দিনটা স্বাভাবিক ছিল না উপকূলের মানুষের। এরও সপ্তাহখানেক আগে থেকে খুলনা উপকূলের মানুষ ‘ফণী’ নামক উৎকণ্ঠায় রাত-দিন পার করছিলেন। খুব বড় সমস্যার আশঙ্কা না থাকলে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে না চাওয়া এই অঞ্চলের মানুষ শেষ পর্যন্ত শুক্রবার দুপুর থেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে থাকেন। খুলনার দাকোপ উপজেলার চালনা পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা মাসুম গাজী ও রেশমা খাতুন নামের এক দম্পতিও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করেন। তাঁরা আশ্রয় নেন চালনা পৌরসভার মাসুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন শেল্টারে। রেশমা ছিলেন সন্তানসম্ভবা।

সেই অন্য রকম সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রেই রেশমার কোল আলো করে আসে এক কন্যাশিশু। আর ঝড়ের মধ্যে জন্ম নেওয়ায় শিশুটির নাম ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়েছে ফণী আক্তার। সেদিন উপজেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম সঞ্জীব দাশের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ওই নবজাতকের বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মা গৃহিণী।

গত সোমবার খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের নির্দেশনা মোতাবেক ওই দম্পতির বাড়িতে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই কন্যাশিশুটির জন্য পোশাক, নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের অধীনে একটি পাকা ঘর করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

মাসুম গাজী বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো স্ত্রী প্রসূতি থাকায় ফণীর তাণ্ডব থেকে বাঁচতে বিকেলে ওই আশ্রয়কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নিই। এর মধ্যে ঘটনার দিন সন্ধ্যার দিকে স্ত্রী প্রসব বেদনায় কাতর হয়ে পড়ে। পরে এই নিরাপদ স্থানে স্ত্রীর কোলজুড়ে আসে একটি ফুটফুটে শিশুকন্যা। আমাদের নিজস্ব জমি-জায়গা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে পাকা ঘর পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছি। আমরা ভীষণ খুশি।’

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, জন্মের স্মৃতিকে স্মরণীয় রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নবজাতকের নাম রাখা হয় ফণী আক্তার। ওই পরিবারের বাসস্থানের জীর্ণ অবস্থা জেলা প্রশাসককে অবহিত করলে তিনি ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের অধীনে একটি পাকা ঘর করে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।