খাসজমিতে ইউপি সদস্যের ঘের

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় এক ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে খাসজমি দখল করে মাছের ঘের করার অভিযোগ উঠেছে। ওই নেতার দাপটে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান ওরফে কামাল সুজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের তিন বিঘা জমিতে মাছের ঘের করেন। এর মধ্যে সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত ৬২ শতক জমি রয়েছে। ছয়-সাত বছর ধরে তিনি ওই খাসজমি দখল করে মাছের ঘের করেছেন। ওই জমির পাশ দিয়ে সরকারি রাস্তা থাকলেও মানুষ ওই রাস্তা ব্যবহার করতে পারছে না।

সরেজমিনে গত সোমবার দেখা যায়, মাছের ঘেরের মধ্যে এখনো ছোট খানা করে মাছ রাখা হয়েছে। খাসজমির ওপর দিয়ে মাছের বেড়ি তৈরি করা হয়েছে। পাশের জমিতে চাষ করা কৃষকেরা জানান, খাসজমি দখল করে বড়লোকেরা মাছ চাষ করছেন। অথচ গরিব মানুষ ওই জমি ভোগ করতে পারছেন না। প্রতিবছর কামরুজ্জামান ঘের থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আয় করছেন। এখানকার ভূমিহীন মানুষেরা ওই ঘেরের বেড়ির ওপর দিয়ে হাঁটলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। এ সময় কৃষক আবদুল হালিম বলেন, গত বছর বর্ষার মৌসুমে তিনি মাঠে ঘাষ কাটতে যাওয়ার সময় বেড়ির ওপর দিয়ে গেলে তাঁকে নিষেধ করা হয়।

তাসলিমা খাতুন বছরের ১২ মাসই মাঠে কৃষিশ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর কোনো জমি নেই। তিনি বলেন, ‘মাছের ঘেরের মধ্যে সরকারি জমি আমাদের মতো গরিব মানুষের পাওয়ার কথা। কিন্তু করে খাচ্ছে বড়লোক।’ তিনি ওই জমি ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্তের দাবি জানান।

কৃষক আমির আলী (৬৬) বলেন, ওই সরকারি জমি দখলমুক্ত করা হোক। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, সুজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে খাসজমির ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হোক। তাহলে ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা গ্রাম থেকে সহজে সুজাপুর সড়কে আসতে পারবে।

জাকির হোসেন বলেন, খাসজমি দখলমুক্ত করে রাস্তা করা হলে সুজাপুর বিলের ফসল আনা–নেওয়ার জন্য তা ব্যবহার করা যাবে।

সুজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষার্থী ওই রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া করে। তারা জানায়, খাসজমির ওপর দিয়ে রাস্তা হলে সহজে বিদ্যালয়ে আসা যায়। বর্ষার মৌসুমে এক কিলোমিটার রাস্তা অতিরিক্ত ঘুরে তাদের বিদ্যালয়ে আসতে হয়। তারা জানায়, এখন তাদের মাঠের ওপর দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া করতে হয়। তারাও রাস্তা করার দাবি জানায়।

ওই সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে এলাকার নজরুল ইসলাম গত ২৫ এপ্রিল একটি লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানূর রহমানের কাছে।

তবে খাসজমি দখল করার বিষয়ে কামরুজ্জামান বলেন, শুধু তিনি নন, আরও অনেকে খাসজমি দখল করেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, তাঁর মাছের ঘেরের মধ্যে লম্বায় পাঁচ হাতের মতো সরকারি জমি রয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর ঘেরের মধ্যের জমি সরকার দাবি করলে তিনি ছেড়ে দেবেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানূর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সরকারি জমি নয়, অন্য জমিও অনেকে দখল করে আছেন। শিগগিরই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।