ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস সাধারণ মানুষের জন্য বিভ্রান্তিকর

আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের যে পূর্বাভাস দেয় তা মূলত সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য। সাধারণ মানুষের জন্য তা বিভ্রান্তিকর। এই মন্তব্য বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের। তাদের দাবি, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস যাতে সুনির্দিষ্ট, বোধগম্য ও নির্দেশনামূলক হয়। একই সঙ্গে সমুদ্রগামী জেলে ও নৌকাগুলোর নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানিয়ে সংস্থাটি থেকে বলা হয়েছে, যাতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় চিহ্নিত করা যায় কোন নৌকাগুলো ফিরেছে আর কারা ফিরতে পারেনি। আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প নেওয়ার সময় জাতিসংঘ, দাতা সংস্থাগুলোকে লক্ষ রাখতে হবে তা যেন স্থানীয় সংগঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। যাতে পরিচালন ব্যয় কমে এবং দীর্ঘ মেয়াদে স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের আগেই বিচ্ছিন্ন দ্বীপসমূহে জোয়ারের প্লাবন ঠেকাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। ‘দুর্যোগের আগে অতি প্রস্তুত ও দুর্যোগের পরদিন সব ভুলে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসুন: দুর্যোগ মোকাবিলায় চাই স্থায়িত্বশীল ও স্থানীয় সক্ষমতা’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ও উপকূলবিষয়ক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করে কোস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী। আর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংস্থাটির পক্ষে বরকত উল্লাহ মারুফ।
দুর্যোগ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নঈম গওহর ওয়ারা বলেন, সরকার সম্প্রতি নতুন সাত হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে এসব ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ন্যূনতম মানবিক সুবিধা পাওয়া যায় না বিধায় মানুষ সেখানে যেতে চায় না। যেমন সরকারি হিসাবে একজন মানুষের জন্য সর্বোচ্চ ২ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। সেখানে একজন মানুষের প‌ক্ষে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান করা সম্ভব নয়। একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যয় দিয়ে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার সময় অন্তত ৩৫টি দুই তলা বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব। এসব বাড়ি হস্তান্তর করে দিলে বাড়ির অধিবাসীরা নিজেরাই যেমন এর যত্ন করতে পারবেন তেমনি দুর্যোগে প্রতিবেশীকে আশ্রয়ও দিতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, সরকার ঘূর্ণিঝড়ের আগে মানুষের প্রস্তুতির কথা বলেন, কিন্তু অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কোনো প্রস্তুতি নেই। যেমন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতো প্রতিষ্ঠানের সারা বছর ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর ৩৬ ঘণ্টা আগে থেকে বরগুনার পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ ছিল না। এই ঘূর্ণিঝড়েরÿক্ষতি কমানোর জন্য ৮ হাজার কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা তা করেনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের এ এইচ এম বজলুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের বদরুল আলম, কোস্ট ট্রাস্টের উপপরিচালক সৈয়দ আমিনুল হক, কোস্টের মোস্তফা কামাল আকন্দ।