বাসের তরুণী নার্সকে গণধর্ষণের আলামত মিলেছে

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে চলন্ত বাসে মৃত্যু হওয়া তরুণী নার্সকে গণধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। সংগ্রহ করা আলামত বিশ্লেষণ করে কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গঠিত মেডিকেল দল প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে, মৃত্যুর কিছু সময় আগে তিনি গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

তিন সদস্যের এই মেডিকেল দলের প্রধান কিশোরগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সজিব কুমার।

জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত মেয়েটি গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আরও কিছু ধাপ বাকি আছে। বাকি পরীক্ষাগুলো দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তখন চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ধর্ষণের প্রাথমিক আলামত পাওয়ার কথা উল্লেখ করে পুলিশের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’

এদিকে ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে—এমন অভিযোগে গত মঙ্গলবার রাতে বাজিতপুর থানায় নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন তরুণীর বাবা। মামলার এজাহারে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। যে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা হলেন গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের নুরুজ্জামান নুরু (৩৯), একই জেলার বীর ওজোলী গ্রামের লালন মিয়া (৩৩), বেঙ্গাবদি গ্রামের আল আমিন (২৮) ও বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর গ্রামের আবদুল্লাহ আল মামুন (৩৭)।

চারজনের মধ্যে পুলিশ নুরুজ্জামান ও লালনকে গ্রেপ্তার করেছে। নুরুজ্জামান বাস চালক আর লালন চালকের সহকারী। আল আমিনও চালকের সহকারী এবং ঘটনার রাতে তিনি তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আবদুল্লাহ আল মামুন পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা। মামুন পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি পিরিজপুর বাজারের একজন ইজারাদার।

পুলিশ জানিয়েছে, ৬ মে ঘটনার রাতে গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা স্বীকার করেছেন, ওই তরুণী তাদের বাসের যাত্রী ছিলেন। স্বর্ণলতা পরিবহনের ঢাকার বিমানবন্দর কাউন্টার থেকে তিনি বাসে উঠেছিলেন। কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। বাসটির শেষ গন্তব্য পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড। কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব ১০ মিনিটের। কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে প্রায় সবযাত্রী নেমে যান। তবে ওই তরুণী ছাড়া আরও কয়েকজন ছিলেন। পিরিজপুর আসার পথে বাজিতপুরের জামতলি গজারিয়া এলাকায় অজ্ঞাত কারণে তরুণী বাস থেকে লাফ দিয়ে সড়কে পড়ে যান। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ধর্ষণ কিংবা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে তরুণীর মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। তখন পুরো গ্রামে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ১০টার জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তরুণীর বাবা বলেন, ‘পরিবারের টানে আমার মেয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি আসতে চেয়েছিল। পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার কিছুক্ষণ আগেও আমাদের সঙ্গে কথা হয়। মেয়ে ও আমাদের অপেক্ষা কখন একে অপরের সঙ্গে দেখা হবে। সেখানে বাস থেকে লাফিয়ে জীবন দেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। আমরা প্রায় নিশ্চিত বাসের ভেতর চালক ও চালকের সহকারীদের দ্বারা আমার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পরে তাঁরা ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে আমার মেয়েকে মেরে ফেলে।’

বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান পাটোয়ারি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আমাদের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চলন্ত বাসে তরুণী নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে করা মামলায় পাঁচ আসামির প্রত্যেকের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আল মামুন এই আদেশ দেন।

যাদের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে তাঁরা হলেন স্বর্ণলতা বাসের চালক নূরুজ্জামান নূরু (৩৯), চালকের সহকারী লালন মিয়া (৩২), সন্দেহভাজন হিসেবে আটক রফিকুল ইসলাম (৩০), খোকন মিয়া (৩৮) ও বকুল মিয়া (৫০)।

বাজিতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান আদালতে তাদের প্রত্যেককে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।