আসামি পলাতক, সাক্ষী না আসায় থমকে আছে বিচারকাজ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

যৌন হয়রানির অভিযোগে করা মামলার আসামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মাহফুজুর রশীদ ফেরদৌস। হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন নেন ২০১৭ সালে। জামিনে বের হওয়ার পর আর বিচারিক আদালতে হাজির হননি তিনি। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে এই মামলায় একজন সাক্ষীও আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেনি। এ কারণে থেমে আছে মামলার বিচারকাজ। আজ বুধবারও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ কৌঁসুলি আফরোজা ফারহানা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো মামলার সাক্ষী এলেই তাঁরা ওই মামলার বিষয়ে প্রস্তুতি নেন। সাক্ষী না এলে আদালত তারিখ দিয়ে দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে সাক্ষীরা আদালতে আসছেন না কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষ কৌঁসুলি আফরোজা ফারহানা আহমেদ বলেন, ‘আমি নিয়োগ পেয়েছি পাঁচ–ছয় মাস। সাংবাদিকেরা জানতে চাওয়ায় আমি মামলার নথি দেখে জানতে পেরেছি মামলাটি আলোচিত।’

মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি ফেরদৌস হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে জামিননামা দাখিল করেন। এরপর ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় ২০১৭ সালের ১ জুন শিক্ষক ফেরদৌসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এ মামলায় ২৮ জন সাক্ষীর মধ্যে গত দুই বছরে মাত্র সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহফুজুর রশীদ ফেরদৌসের বিরুদ্ধে মামলা হয়। যৌন হয়রানির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষক ফেরদৌসকে বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ১৪ আগস্ট শিক্ষক মাহফুজুর রশীদকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এই মামলায় গত দুই বছরে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাতজন।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ বিচারাধীন আছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-৬ থেকে বর্তমান আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে সর্বশেষ ৮ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। সেদিনও কেউ সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেননি।

মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০১৬ সালের ৪ মে কলাবাগান থানায় ফেরদৌসের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মামলা করেন। মামলা করার পর ওই দিনই কলাবাগানের বাসা থেকে শিক্ষক ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হলে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।

২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট এই মামলায় অভিযোগপত্র দেন সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের উপপরিদর্শক আফরোজা আইরীন। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষক ফেরদৌস ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং প্রশ্নপত্র সরবরাহ ও মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এক ছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন ফেরদৌস এবং ওই ছাত্রীর বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ওয়েবসাইট ও মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ ছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষক ফেরদৌসের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার সপক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এই মামলায় যৌন হয়রানির শিকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলায় ওই পাঁচ শিক্ষার্থীসহ ২৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর এ মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়।