৪০ কোটি টাকার সড়কে ধস

>

গত জানুয়ারিতে কাজ হস্তান্তর। বৃষ্টিতে অন্তত ২৫ মিটার স্থানে ব্লকে ধস। ইতিমধ্যে সব টাকা তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কের পূর্বধলা উপজেলার রাজাপুর এলাকায় অন্তত ৩০ মিটার স্থানে ব্লকে ধস দেখা দিয়েছে। গত রোববার বিকেলে বৃষ্টির পরপরই ব্লকগুলো ধসে যায়। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় ব্লক ধসে গেছে বলে অভিযোগ।

তবে সওজ কর্তৃপক্ষ সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ওই স্থানে হয়তো মাটির কমপেকশন ঠিকমতো হয়নি। তাই এমনটি হয়েছে। ধসে যাওয়া অংশটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা, জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কটি ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে প্রশস্তকরণসহ সংস্কারকাজ উদ্বোধন করা হয়। ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থ এ সড়কে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-সিপিসিএল, দি রিলাইএবল বিল্ডার্স, ওটিবিএল, মেসার্স রেজভীয়া কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স মাইনউদ্দিন বাঁশি। এ কাজ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু মেসার্স রেজভীয়া কনস্টাকশন এখনো কাজ শেষ করতে পারেনি। এ ছাড়া মেসার্স মাইনউদ্দিন বাঁশিরও কিছু এখনো বাকি আছে।

ব্লক ধসে ঝুঁকিতে সড়ক। শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কের পূর্বধলা উপজেলার রাজাপুর এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
ব্লক ধসে ঝুঁকিতে সড়ক। শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কের পূর্বধলা উপজেলার রাজাপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সড়কের বনপাড়া থেকে বালুঘাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার অংশের কাজ পায় দি রিলাইয়েবল বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই অংশের ব্যয় ধরা হয় ৪০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের অক্টোবরে কাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে তা সওজের কাছে চলতি জানুয়ারি মাসে হস্তান্তর করা হয়। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সব টাকা তুলে নিয়েছে। কিন্তু গত সোমবার বৃষ্টির পর বিকেলের দিকে রাজাপুর এলাকায় অন্তত ২৫ মিটার স্থানে ব্লক ধসে যায়।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সওজের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঠিকাদারেরা নিম্নমানের কাজ করায় উদ্বোধনের আগেই ব্লকগুলো ধসে গেছে। অথচ এই কাজ শুরুর দিকে পাথর, সিমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা নিয়ে অভিযোগ করছিলেন তাঁরা। এ নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, স্মারকলিপি, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচিও পালন করেন।

এলাকাবাসী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দীর্ঘ তিন বছর চলাচলের অনুপযোগী ছিল। প্রধানমন্ত্রী একনেকে অনুমোদন করায় ৩১৬ টাকা ব্যয়ে সড়কের কাজ হয়। কিন্তু এই কাজের দেখাশোনা করার দায়িত্বে থাকা সওজ বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঠিকাদারেরা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় এ নিয়ে আন্দোলন করলেও কাজ হয়নি। তাই সড়ক উদ্বোধনের আগেই একটু বৃষ্টিতে ব্লক ধসে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, কয়েক দিন পর হয়তো সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা দেবে।

কাজের দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা দি রিলাইএবল বিল্ডার্স প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টিতে ব্লকগুলো ধসে গেছে। আমরা বুধবার থেকে ভাঙা অংশের সংস্কারকাজ শুরু করে দেব। আশা করছি ৮–১০ দিনের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যাবে।’ এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নতুন মাটি, তাই ভারী বৃষ্টি হলে ধস নামতেই পারে। আর আমরা তিন বছরের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে তা ঠিক করে দেব। তা ছাড়া কাজের গুণগত মান মন্দ হয়নি। এটা মানুষজন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।’

পুরো সড়কটির কাজ দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা নেত্রকোনা সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাকিরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে কিছু অংশের ব্লক ধসে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা ভাঙা অংশটি মেরামত করে দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই স্থানে হয়তো মাটির কমপেকশন ঠিকমতো হয়নি। তাই এমনটি হয়েছে। আর চুক্তি অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে সড়কে যেকোনো সমস্যা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেরামত করে দিতে বাধ্য থাকবে।’

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম তরফদার সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ধসে যাওয়া অংশটি এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক করে দেওয়া হবে।