দেড় বছরেও সংস্কার নেই, দুর্ভোগ

ভাঙাচোরা সড়কে জমে থাকা জল-কাদা মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। গতকাল দুপুরে সিলেট নগরের টিবিগেট-উত্তর বালুচর সড়কে।   ছবি: প্রথম আলো
ভাঙাচোরা সড়কে জমে থাকা জল-কাদা মাড়িয়ে চলতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। গতকাল দুপুরে সিলেট নগরের টিবিগেট-উত্তর বালুচর সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের ঠিক লাগোয়া হলেও সড়কটির বেশির ভাগ অংশই সদর উপজেলার টুলটিকর ইউনিয়নে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি বেহাল হয়ে থাকলেও তা পুনর্নির্মাণে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছে না।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের অধিকাংশ স্থানে পিচ ও খোয়া উঠে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। সড়কের পাশেই কিছু নিচু টিলা রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে টিলার বালু এসে সড়কে পড়েছে। ফলে সড়ক কাদাপানিতে একাকার হয়ে আছে।

সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। তাঁরা আরও জানান, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক শ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, রিকশা, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করে। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এ সড়ক দিয়েই সিলেট সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে যেতে হয়। সড়কের অন্তত আধা কিলোমিটার অংশ পড়েছে নগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এবং বাকি অংশ সদর উপজেলার টুলটিকর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে।

উত্তর বালুচর এলাকার বাসিন্দা মাহমুদ হোসেন ও আক্তার মিয়া বলেন, নগরের ঠিক পাশে হলেও সড়কটিতে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়াই পড়েনি। দীর্ঘদিন ধরে পুনর্নির্মাণের অভাবে সড়কটিতে অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ভাঙাচোরা সড়কটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। তবে এই সমস্যা দূর করতে জরুরিভাবে কিছু ইটের সুরকি ও বালু ফেলে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে রাখা যেতে পারে।

সড়কের খারাপ অবস্থার বিষয়ে রিকশাচালক রমিজ আলী বলেন, ‘ভাঙা রাস্তায় রিকশা চালাইতে কষ্ট হয়।’

নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় আনাছ মিয়ার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তিনি সড়কের পাশের আল-ইসলাহ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সকালে তিনি মোটরসাইকেলযোগে জিন্দাবাজার এলাকায় যান। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন। সড়কে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘ঝাঁকুনি খেতে খেতে সড়কটি দিয়ে যেতে হয়। গাড়ি চলে হেলেদুলে। এলাকাবাসীর ভোগান্তি নিরসনের জন্য সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।’

এলাকাবাসী জানান, সড়কটি শুরুতে কাঁচা ছিল। ২০০৪ সালের দিকে এটি পাকা করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এ সড়কে সংস্কারকাজ হয়। বছরখানেকের মধ্যে পুনরায় সড়কটি বেহাল হলেও আর সংস্কার হয়নি। অথচ এ সড়কের আশপাশের এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্তত ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষের বাস রয়েছে। তবে সড়কের ডান-বাঁয়ে জায়গা রয়েছে। তাই সড়কটি কেবল সংস্কার নয়, বরং প্রশস্ত করে পুনর্নির্মাণ করা উচিত। এতে ভবিষ্যতে এ সড়কের যানবাহন চলাচল এখানকার তুলনায় বাড়লেও যানজট এড়ানো সম্ভব হবে।

টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আলী হোসেন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত অংশ পুরোটাই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। আমি সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে এ সড়কের বিষয়ে কথা বলেছি। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি দুই পাশে নর্দমাসহ সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক সংস্কারের জন্য আমাদের সেভাবে খুব একটা বাজেট নেই। তাই শহরতলির নাগরিকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে আশপাশের মানুষের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশন যেন পুরো সড়কটি একইরকমভাবে প্রশস্ত করে নির্মাণ করে দেয়, সে জন্য মেয়রকে অনুরোধ করেছি।’

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরও সড়কটি সংস্কারে আমাদের তাগাদা দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ সড়কটি নির্মাণে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।’