রেস্তোরাঁয় দল বেঁধে ইফতার

রেস্তোরাঁর ভেতরে এখনো ইফতার আড্ডা জমেনি, বাইরে ক্রেতাদের ভিড়। গতকাল রাজধানীর সাতমসজিদ সড়কের একটি দোকানে।  ছবি: প্রথম আলো
রেস্তোরাঁর ভেতরে এখনো ইফতার আড্ডা জমেনি, বাইরে ক্রেতাদের ভিড়। গতকাল রাজধানীর সাতমসজিদ সড়কের একটি দোকানে। ছবি: প্রথম আলো

ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কটিকে রেস্তোরাঁ সরণি বললে ভুল বলা হবে না। দুই শতাধিক রেস্তোরাঁ আছে এই সড়কে। ১২টি বহুতল ভবন আছে, যার প্রায় সব তলায় আছে রেস্তোরাঁ। আছে দুটি বড় ফুড কোর্ট। খাবার আছে হাজারো ধরনের। ইফতারের জন্য নানা দেশের, নানা প্রান্তের খাবারের পসরা সাজানো এসব রেস্তোরাঁর মেন্যু। শান্ত পরিবেশে বসে খেতে খেতে আড্ডার সুযোগ করে দিয়েছে এসব রেস্তোরাঁ।

চইঝাল, মেজবানি মাংস কিংবা পাহাড়ি রেসিপি মেনে বাঁশের মধ্যে রান্না মুরগিসহ আঞ্চলিক নানা খাবার আছে কয়েকটি রেস্তোরাঁয়। তবে দেশি খাবার ছাপিয়ে প্রাধান্য এখন বিদেশিতে। লাতিন খাবার, কন্টিনেন্টাল, থাই, চায়নিজ, জাপানি, কোরিয়ান—সবই আছে খাবারের টেবিলে। হিমালয়ের পাদদেশের খাবার মোমো তো এখন তুমুল জনপ্রিয়। ভারতীয় খাবারও ছড়িয়ে আছে অনেক রেস্তোরাঁয়। বিদেশি খাবারের দেশীয় রেস্তোরাঁর পাশাপাশি আছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের নামকরা রেস্তোরাঁর শাখা বা চেইন শপ। এসব রেস্তোরাঁয় ইফতারের জন্য আছে নানা রকমের প্ল্যাটার। প্ল্যাটার নিলে ইফতারের সঙ্গে রাতের খাবারও হয়ে যায়। বিভিন্ন দামের প্ল্যাটার আছে এসব রেস্তোরাঁয়। আছে বুফে অফার। ৪০ ধরনের খাবার মিলবে ৬০০ টাকায়।

গতকাল বুধবার ইফতারের সময় সাতমসজিদ সড়কের একাধিক রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটি টেবিলজুড়ে বসে আছে ছোট ছোট কয়েকটি দল। আবাহনী মাঠের কাছে দোতলা বাড়ি নিয়ে গড়ে ওঠা ক্যাফে দ্রুমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৃষা সামিরা প্রথম আলোকে বলেন, রোজার প্রথম এক সপ্তাহে ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকে। এরপর জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের। আন্তর্জাতিক চেইন রেস্তোরাঁ সিক্রেট রেসিপি, বিবিকিউ, গ্লোরিয়া জিনস, ডমিন’স, ম্যানহাটন ফিশ মার্কেটের ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইফতারের সময় এখন অনেকেই প্রতিদিন ঘরে বসে দেশি খাবার খেতে চান না। দল বেঁধে চলে আসেন রেস্তোরাঁয় ইফতার করতে। তাই রেস্তোরাঁগুলো ইফতারের জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। কয়েক দিনের মধ্যেই সব রেস্তোরাঁয় আড্ডা জমে উঠবে বলে মনে করেন তাঁরা।

এ সড়কের খুব কাছে স্টার কাবাবে গিয়ে দেখা গেল কোনো টেবিল ফাঁকা নেই। ২০০ মানুষের সমাগম এখানে। এখানে কথা হয় বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত কামরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০০৩ ব্যাচের ঢাকা কলেজের বন্ধুরা মিলে ইফতার করতে এসেছেন। প্রতিবছর রোজার সময় এমন ইফতার পার্টি করেন তাঁরা। মোহাম্মদপুর থেকে আসা ফারহানা নিলু বলেন, কয়েক দিন পর রেস্তোরাঁয় এসে জায়গা পাওয়া যাবে না। তাই শুরুর দিকেই পরিবারের সবাই মিলে ইফতার করতে এসেছেন।

একাধিক রেস্তোরাঁ নিয়ে গুলশানে গড়ে ওঠা সেফ’স টেবিলের নতুন শাখা হয়েছে ধানমন্ডিতে। এখানে কথা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাবিলা মেহজাবিন ও তনিমা চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁরা বলেন, একসঙ্গে ইফতার করার জন্য রেস্তোরাঁই ভরসা। রোজার সময় দল বেঁধে আড্ডায় আড্ডায় স্বাদ নেন একাধিক রেস্তোরাঁর খাবারের।

ইফতারের পর চা বা কফির চুমুকে জমে আড্ডা, গল্প। এ কারণেই বুঝি ইফতারের সময় মুখরিত হয়ে ওঠে রেস্তোরাঁগুলো।