এসএসসি-সমমানে শূন্য পাস ১০৭ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবারের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল একজন পরীক্ষার্থী। কিন্তু সেই একজনই পাস করতে পারেনি। ফলে প্রতিষ্ঠানটি বোর্ডের খাতায় শূন্য পাসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলো।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক গতকাল বুধবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানটির খুব একটা কার্যক্রম নেই।

এই মাদ্রাসাসহ এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় শূন্য পাস করা ১০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। কারও এমপিওভুক্তি, কারও একাডেমিক স্বীকৃতি, কারও পাঠদানের অনুমতি বাতিল বা স্থগিত করা হবে।

শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫৯টি মাদ্রাসা, ৪৩টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে দুটি, দিনাজপুর, রাজশাহী ও যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীন একটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

>

শূন্য পাস ১০৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
মাদ্রাসার সংখ্যা ৫৯টি 
কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৪৩টি 
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ২টি 
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ১ টি
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ১ টি
যশোর শিক্ষা বোর্ডে ১ টি

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এমন ৫৯টি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বোর্ড। এর মধ্যে আটটি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ (মূল বেতন ও কিছু ভাতা) পেয়ে থাকেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফ উল্যা প্রথম আলোকে বলেন, শূন্য পাস করা এই মাদ্রাসাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গতকালই কারণ দর্শানোর নোটিশের ফাইল অনুমোদন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে হবে। এই জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যবস্থা হিসেবে মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হলে বাতিল বা স্থগিত, কোনো কোনো মাদ্রাসার একাডেমিক স্বীকৃতি বা পাঠদানের অনুমতি বাতিল বা স্থগিত করা হবে।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এমন মাদ্রাসাও আছে যেগুলোতে হাতে গোনা দু-চারজন পরীক্ষায় দিয়ে সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। যেমন রংপুর সদরের মমিনপুরহাট দাখিল মাদ্রাসায় মাত্র চারজন পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এই মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৪৩টি প্রতিষ্ঠান শূন্য পাসের তালিকায় থাকলেও বোর্ডটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সুশীল কুমার পাল বলেছেন, প্রকৃত সংখ্যাটি আরেকটু কমবে। তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই ব্যবহারিক নম্বর না পাঠানোয় সংখ্যাটি বেশি হয়েছে। ফল প্রকাশের আগমুহূর্তে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবহারিক নম্বর পাঠানোয় শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯ টিতে নেমে এসেছে। যদিও সময় কম থাকায় তখন ফলাফলের সেই তথ্যটি দেওয়া যায়নি। ফল পুনর্নিরীক্ষণের সময় এ সমস্যা মেটানো হবে। এরপরও যেসব প্রতিষ্ঠানে শূন্য পাস থাকবে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শূন্য পাস করা দুটি প্রতিষ্ঠান বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীন। ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস জানিয়েছেন, ফল প্রকাশের পরদিনই ওই দুটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর এগুলোর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। কারণ বোর্ড চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে পারে না।

প্রসঙ্গত, এসএসসি ও সমমানে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের সবাই অকৃতকার্য হলেও বিপরীতে ২ হাজার ৫৮৩টি প্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থীই পাস করেছে। গতবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান ছিল ১ হাজার ৫৭৪ টি।