এখনো অনেক কিছু জানে না পুলিশ

শাহিনুর আক্তার
শাহিনুর আক্তার

গুরুতর আঘাতের কারণে নার্স শাহিনুরের মাথার পেছনের অংশের খুলি ফেটে গিয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়ার কারণে, না ভারী কোনো কিছুর আঘাতে এমন ক্ষত হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আর পুলিশ বলছে, ঘটনা সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানার বাকি রয়েছে তাদের। এদিকে শাহিনুর হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের শাস্তি দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা, কিশোরগঞ্জসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেছেন নার্স এবং নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের নার্স শাহিনুর গত সোমবার স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কদিয়াদী যাওয়ার পথে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন। চলন্ত বাসে তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় অভিযোগে বাজিতপুর থানায় মামলা করেছেন নিহত শাহিনুরের বাবা গিয়াস উদ্দিন। ওই মামলায় বাসচালক ও সহকারীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান বলেন, শাহিনুরের মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে। আঘাতের কারণে পেছনের খুলি দুই ভাগ হয়ে গিয়েছিল। ধর্ষণের আলামতসহ অন্যান্য ক্ষতচিহ্নের বিষয়ে পুলিশের কাছে পাঠানোর জন্য প্রতিবেদন প্রায় প্রস্তুত।

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া বাসচালক নুরুজ্জামান ও চালকের সহকারী লালন মিয়াসহ পাঁচজনকে আট দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছে ঘটনার বিষয়ে অনেক কিছুই জানা গেছে। জানতে চাইলে বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে এখনো অনেক কিছু জানার বাকি।’

এক আসামি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

এদিকে মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করা চার নম্বর আসামি বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও ইজারাদার আবদুল্লাহ আল মামুনকে নিয়ে মিশ্র আলোচনা হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, হত্যাকাণ্ডের পরদিন মঙ্গলবার ভোরে শাহিনুরের গ্রামের বিক্ষুব্ধ লোকজন পিরিজপুর বাজারে এসে স্বর্ণলতা পরিবহনের বাস, কাউন্টার এবং কিছু দোকানে ভাঙচুর চালায়। মামুনের বাড়ি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া। এ সময় মামুনকে বাসা থেকে বেরিয়ে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে দেখেছেন এলাকার অনেকেই। আগের রাতেও তাঁকে বাজারে দেখা গেছে। তাই চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তাঁকে আসামি করা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মামুনের বাবা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাপ মিয়ার দাবি, বাজারের ইজারা গিয়ে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের সঙ্গে তাঁর পরিবারের শত্রুতা তৈরি হয়েছে। এর জেরেই থানায় দেনদরবার করে মামুনকে মামলার আসামি করা হয়েছে।

নিহত শাহিনুরের বাবা ও মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, মামলার পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেছে তাঁর ছেলে সুজন মিয়া। মুঠোফোনে সুজন মিয়া বলেন, আসামি মামুন হত্যা কিংবা ধর্ষণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না বলেই তিনি মনে করেন। তবে স্বর্ণলতা পরিবহনের সঙ্গে মামুনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।

নার্স শাহিনুর আক্তার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন ইবনে সিনা হাসপাতালের সহকর্মীরা। গতকাল সকালে রাজধানীর কল্যাণপুরে।  ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
নার্স শাহিনুর আক্তার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন ইবনে সিনা হাসপাতালের সহকর্মীরা। গতকাল সকালে রাজধানীর কল্যাণপুরে। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন


বিক্ষোভ, বিচার দাবি
শাহিনুর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন ঢাকা নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে কল্যাণপুরে ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন ইবনে সিনার নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও নিহত শাহিনুরের সহকর্মী নার্সরা। শাহিনুর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গতকাল ভৈরব পৌর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছে ভৈরব বন্ধুসভা। এতে পৌর মেয়র ফখরুল আলম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিনসহ ভৈরবের চিকিৎসক, নার্সসহ দুই শ মানুষ অংশ নেন।

একই দাবিতে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে পৃথক তিনটি মানববন্ধন হয়েছে। প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ  জানান, গতকাল সকাল ১০টায় কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সামনের সড়কে মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) কিশোরগঞ্জ শাখা। কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া, ডেপুটি সিভিল সার্জন মুজিবুর রহমান এখানে বক্তব্য দেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের স্টেশন রোডের কালীবাড়ি এলাকায় মহিলা পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা এবং বেলা পৌনে ১১টার দিকে গৌরাঙ্গ বাজার এলাকায় বাম গণতান্ত্রিক জোট মানববন্ধন করেছে।

একই দাবিতে বরিশালে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন নার্সিং শিক্ষার্থী ও নার্সরা।