অসম্ভবকে জয় করল খাদিজা

মামির সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে খাদিজা। প্রথম আলো
মামির সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে খাদিজা। প্রথম আলো

এক পা নেই, আরেক পা-ও পুরোপুরি স্বাভাবিক না। বাম হাতের চারটি আঙুল নেই। আর ডান হাতের কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত আঁকাবাঁকা। আঙুলগুলোও অচল। কৃত্রিম পা দিয়ে সে চলে। আর সেই আঁকাবাঁকা হাতে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪ দশমিক ৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে খাদিজা আক্তার ওরফে রিমা।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল রিমা।

নাটোর সদর উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের কদমতলী বাজারের লুৎফর রহমান ও হাসি খাতুন দম্পতির মেয়ে খাদিজা আক্তার রিমা। মেয়েকে পড়ালেখা করানোর আর্থিক সংগতি নেই তাঁদের। তাই ছোটবেলা থেকেই খাদিজা তার নানা আশকান প্রামাণিকের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। রিমার নানার বাড়ি বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড়ের জামতলা মোড়ে।

রিমা জানায়, পড়ালেখায় তার অদম্য আগ্রহ দেখে মামি মেরিনা আক্তার তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। তিনি প্রতিদিন তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যেতেন। কৃত্রিম পায়ে চলাফেরা আর অস্বাভাবিক হাতে লিখতে অসুবিধা হয় তার। তবু সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। লিখতে অসুবিধা হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারেনি সে। তাই জিপিএ-৫ পায়নি। তবে উচ্চমাধ্যমিকে লেখার গতি বাড়িয়ে জিপিএ-৫ অর্জনের অঙ্গীকার করে সে।

শত বাধা–বিপত্তির মধ্যেও এগিয়ে যেতে চায় রিমা। বড় হয়ে সমাজসেবামূলক পেশায় আত্মনিয়োগ করতে চায় সে।

তার মামি মেরিনা আক্তার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল রিমার। প্রতিদিন ঝড়বৃষ্টি, রোদ, কাদাপানি উপেক্ষা করে কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে নিয়মিত স্কুলে যেত। তার এ ইচ্ছার কারণেই নিজের বাড়িতে রেখে তাকে সহযোগিতা করছি। আমার কাঁধে হাত রেখে সে প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।’