দুই জোটের অস্থিরতায় বিপাকে বিএনপি

এত দিন জোটের মধ্যে সমস্যার কথা প্রকাশ্যে বলে এসেছে ২০–দলীয় জোট। এবার আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকরাও বলতে শুরু করেছে। ২০ দল থেকে এক শরিক চলে গেল। ঐক্যফ্রন্টের একজন ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। দুই জোটেরই কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিএনপি। হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করে শপথ, ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টে অস্থিরতা, দলীয় প্রধান জেলে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিদেশে—সব মিলিয়ে রাজনীতিতে কিছুটা বিপাকে পড়েছে বিএনপি।

নির্বাচন–পরবর্তী রাজনীতিতে বিএনপি বেশ চমক দেখিয়েই শপথ নিয়েছে। শপথের পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁদের শপথ না নেওয়ার ব্যাপারে আগের সিদ্ধান্তই ভুল ছিল। তবে নির্বাচিত হয়ে তিনি শপথ নেননি। বিএনপির শপথ নেওয়া এবং শপথ নিয়ে তাদের রাজনীতিটা পছন্দ করেননি নিজ দলের অনেক নেতাই। এ ছাড়া তার দুই জোটের শরিকেরা শপথ নেওয়ায় বেশ সমালোচনা করছে।

সমালোচনার মধ্যেই গত সোমবার ২০ বছরের সম্পর্কের ২০–দলীয় জোট ছেড়ে দেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। তাঁর জোট ছাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি ৩০ ডিসেম্বরের ‘প্রহসনের’ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন। পার্থর বিজেপি ছাড়াও ২০ দলের অন্য শরিকেরাও বিএনপির ওপর নাখোশ ঐক্যফ্রন্টকে কেন্দ্র করে।

বিজেপি জোট ছাড়ার তিন দিনের মাথায় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে দলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে যেসব অসংগতি আছে, তা নিরসন করা না হলে ৮ জুন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে।

নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকার সমালোচনা করেন জোটের শরিক দলের এই নেতা। ঐক্যফ্রন্ট পরিচালনায় দুর্বলতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন। এ ছাড়া ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতদের যে সাতজন শপথ নিয়েছেন, তাঁদের নিন্দা জানান কাদের সিদ্দিকী।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যকে স্বাগত জানান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি ওনার জায়গা থেকে তো বলতেই পারেন। আমি স্বাগত জানাই। আমরা সব সময় সরকারি দলের জবাবদিহির প্রশ্নে হইচই করেছি। আমাদেরও জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা থাকতে হবে। জনগণও আমাদের দেখছে, কী করছি না করছি। আমরা এখন যার যার দল সামলাচ্ছি। প্রতিটা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি চলছে। দুই সপ্তাহ যাক। একটু স্থির হই। আমরা বসব।’

কাদের সিদ্দিকীর ঐক্যফ্রন্টের অসংগতি নিরসনের তাগিদ দেওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ভবিষ্যৎ আন্দোলন-সংগ্রাম-গণজাগরণের ভিত্তি সৃষ্টি করবে।’

নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে জোটের ভূমিকা নিয়ে কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য প্রসঙ্গে আবদুর রব বলেন, জনগণকে নিয়ে যে প্রতিরোধ-সংগ্রাম গড়ে তোলা প্রয়োজন ছিল, তা হয়নি। তবে অসংগতি দূর করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতিকে আরও বেগবান করতে হবে বলে জানান।

কাদের সিদ্দিকীর বেঁধে দেওয়া এক মাসের মধ্যে সংকট নিরসনের সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন না ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। জোটের মধ্যে অসংগতি আছে স্বীকার করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে অসংগতি রয়েছে, তা দূর করা জন্য বিএনপিকেই বলতে হবে, শপথ নেওয়ার ব্যাপারে এই এই হয়েছে, লন্ডন থেকে নির্দেশ আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, উদ্যোগটা বিএনপির বা ড. কামাল হোসেনের নেওয়া উচিত। যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার জন্য বিএনপিকেই উদ্যোগ নিতে হবে।’ তবে তিনি জোট নিয়ে আশা ছেড়ে দিতে চান না।

দলের একটা খারাপ সময় যাচ্ছে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে, যিনি দল চালাচ্ছেন তিনি দেশের বাইরে। দেশের বাইরে থেকে দল চালানো কঠিন, তবে তিনি চেষ্টা করছেন।

ঐক্যফ্রন্টের অসংগতি আছে, কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে সঠিক বলে জানান মাহবুবুর রহমান। শপথ নিয়ে কাদের সিদ্দিকীর সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক ভুল হয়েছে, ভুল করছি।’

বর্তমান সংকট নিরসন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, সংকটের উত্তরণ ঘটতে পারে দলের মধ্য থেকেই। দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আন্দোলনের জন্য দলের একটা ভূমিকা থাকতে হবে।