আমাদের বয়স হয়েছে, আমরা বৃদ্ধ হয়েছি: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের লড়াই করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে। হতাশ হলে চলবে না। আমাদের প্রতিটি সুযোগ নিতে হবে, পথ বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটা সহজ কাজ নয়। তিনি বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে এবং আমরা বৃদ্ধ হয়েছি। এখন তরুণদের সময়। তরুণেরাই সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

আজ শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আগমন, বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালনের তিন যুগ পূর্তি’ উপলক্ষে এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

ফখরুল ইসলাম বলেন, আমি সুস্থ নই। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের সময় তো শেষ হয়ে আসছে। এখন যারা সামনে আসবেন, তাদের শুধু রাজনীতি নয়, এই বাংলাদেশকে বাঁচাতে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ নিজস্ব মর্যাদায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে কি পারবে না এবং বাংলাদেশ নিজের পায়ের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে কি পারবে না—আজকে সেই প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে। কারণ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখানে যারা আছি, আমরা দীর্ঘকাল ধরে কাজ করছি। তাই আমাদের বয়স হয়েছে এবং আমরা বৃদ্ধ হয়েছি। আর এখন আপনাদের সময়। আপনারা এগুলো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্নভাবে বিএনপি ও দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। কারণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে দল পরিচালনায় করছেন। তাঁর নির্দেশে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক রাজনীতির দিকে নিয়ে যাব।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া যখন রাজনীতিতে আসেন, তখন বাংলাদেশ একটি স্বৈরাচার শাসকের কবলে পড়েছিল। শুধু স্বৈরাচার শাসনই ছিল না, অত্যন্ত সুচারুভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করার নতুন একটি প্রক্রিয়া ও প্রচেষ্টা ছিল। আমরা লক্ষ্য করেছি, ‘শহীদ’ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যার পরে স্বৈরাচার এরশাদের রাজনীতিতে আগমন, এটি একই সূত্রে গাঁথা ছিল। এটাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার উপায় নেই।

বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ছিল। সেই চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিয়ে সেই দলটিকে খালেদা জিয়া রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব নেন। এটি তাঁর জীবনে ও বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বড় অধ্যায়। আর আমার মনে হয়, এ দেশে খালেদা জিয়াকে বিভিন্নভাবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। তবে আমার মতে, এশিয়ায় তাঁর মতো গণতন্ত্রকামী ত্যাগী নেত্রী খুব কম খুঁজে পাওয়া যাবে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র উঠে গেছে। গণতন্ত্র আর নেই। একদলীয় শাসন এখন একটি ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর মুখে উচ্চারিত হয় বাকশালের কথা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজ খালেদা জিয়া একটি মিথ্যা মামলায় ‘ফরমায়েশি রায়ে’ কারাবন্দী রয়েছেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা তাঁকে মুক্ত করতে কিছুই করতে পারিনি। তবে আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সাহসী নেতারা মাঠে নামবেন এবং আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব।

চিত্র প্রদর্শনীতে খালেদা জিয়ার রাজনীতির শুরু থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়া পর্যন্ত ৯০টি ছবি প্রদর্শন করা হয়।

ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক বাবুল তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।