সেই গাছের লিচু পেড়ে নিলেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলের পেছনে ইজারা দেওয়া একটি গাছ থেকে লিচু পেড়ে নেওয়া হচ্ছে।  ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলের পেছনে ইজারা দেওয়া একটি গাছ থেকে লিচু পেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবার রাতে একটি গাছ থেকে লিচু পাড়তে গিয়ে প্রহরীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন ছাত্রলীগের পাঁচ-ছয়জন নেতা-কর্মী। অভিযোগ উঠেছে, ওই ঘটনার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী সেই গাছ থেকে প্রায় সব লিচু পেড়ে নিয়ে চলে গেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে রোকেয়া হলের পেছনের সেই লিচুগাছ থেকে ২০-২৫ জনকে লিচু পাড়তে দেখা যায়। তাঁরা লিচুসহ গাছের ডাল ভেঙে নেন। ছাত্রলীগের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হওয়ার কারণে সেখানে কোনো প্রহরী ছিলেন না। ওই ২০-২৫ জনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক উপসম্পাদক মনিরুল ইসলামও ছিলেন। লিচু পাড়ার সময় কথা বলতে গেলে তিনি এক সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় রোকেয়া হলের পেছনের ‘গোদাগাড়ী’ নামের ওই লিচুবাগানের ইজারা নিয়েছেন আবদুল্লাহ ইবনে মনোয়ার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘মামলার পর থেকে পুলিশ ওই বাগানের দিকে আমাদের কাউকে যেতে দিচ্ছে না। ফলে বৃহস্পতিবার বিকেলে কোনো প্রহরী ছিলেন না। কিন্তু পুলিশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের যেতে দিয়েছে। তাঁরা ওই গাছ থেকে লিচু পেড়ে নিয়ে গেছেন। দরপত্রসহ বাগানের রক্ষণাবেক্ষণে আমার প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমার কাছে লিচু পাড়ার ছবি-ভিডিও ফুটেজ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ঘটনাটি জানিয়েছি। কিন্তু তারা বলছে, তারা কিছু জানে না। তাই আমিও মামলার কথা ভাবছি।’

মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের অভিযোগের প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে মনোয়ার বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে সেখানে মুরাদ ও রুবেল নামের দুই প্রহরী পাহারা দিচ্ছিলেন। সেখানে ছাত্রলীগের কানন, মেহেদীসহ কয়েকজন এসে ২০ হাজার টাকা অথবা পাঁচটি গাছ থেকে লিচু পাড়তে দেওয়ার দাবি করেন। প্রহরীরা রাজি না হওয়ায় কানন তাঁদের হুমকি দেন। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই প্রহরীকে বেঁধে রেখে তাঁরা লিচু পাড়তে থাকেন। দ্রুত নামতে গিয়ে কানন ও মেহেদী গাছ থেকে পড়ে যান। প্রহরীরা কাউকে মেরে হাত ভেঙে দেননি। অথচ তাঁরাই আবার উল্টো আমাদের নামে মামলা করেছেন।’

ছাত্রলীগের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের ১০-১২ জন নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘুরতে বের হয়েছিলেন। একপর্যায়ে তাঁরা রোকেয়া হলের পেছনে যান। লিচু খাওয়ার ইচ্ছা হওয়ায় তাঁরা প্রহরীদের কাছে কিছু লিচু পাড়ার অনুমতি চান। উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে প্রহরীরা বাঁশ, লাঠি ও দুই-তিনটি ভোঁতা রামদা দিয়ে হামলা চালান। তাঁদের মারধরে ছাত্রলীগের এক নেতার দুই হাত ভেঙে যায়।

জানতে চাইলে নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক উপসম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে আমি সংগঠনের দুই ছোট ভাইকে নিয়ে ওই দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। সেখানে কয়েকজনকে লিচু পাড়তে দেখি। আমরাও লিচু খেয়েছি।’

সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বহিরাগত ব্যক্তিদের নিয়ে খুব ঝামেলা হচ্ছে। তাই তিনি শিক্ষার্থী নাকি বহিরাগত, তা জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আমার আচরণকে অন্যভাবে নিয়েছেন কি না, জানি না।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, লিচু খাওয়ার জন্য তাঁরা একজনের হাত ভেঙে দিয়েছেন। এখন সেখানে প্রহরী নেই। তাই শুধু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নন, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও লিচু খাচ্ছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি শুনেছি। তবে কোনো অভিযোগ পাইনি। তা ছাড়া এ বিষয়ে আমার কিছু করারও নেই।’