যত্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (আইএসপিপি)-যত্ন প্রকল্পের তালিকা প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বুধবার দুই শতাধিক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ওই ব্যক্তিদের অভিযোগ, ইউএনওর কাছ থেকে পাওয়া ফরম পূরণ করে ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) জমা দিলেও প্রকল্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বরং অর্থের বিনিময়ে অন্যদের নাম ঢোকানো হয়েছে।

সদর ইউনিয়নের হরিশ্বর তালুক এলাকার মরিয়ম বেগম, মালেকা বেগম ও শাহিদা খাতুন বলেন, সুদের ওপর টাকা নিয়ে তাঁরা ইউপি সদস্যকে পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছেন। তবুও পুষ্টি ভাতার কার্ড জোটেনি।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গরিব অন্তঃসত্ত্বা নারী ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে আইএসপিপি-যত্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাজারহাটের সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ৯ হাজার ৮০০ পরিবার এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত। এর অধীনে প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে ১ হাজার ৪০০ জনকে কার্ড দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের ৫০ শতকের কম জমি রয়েছে, এমন পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং শূন্য থেকে ২৪ মাস এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে, তাঁরা এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী। এর আওতায় অন্তঃসত্ত্বা নারী চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে চার হাজার টাকা এবং টানা তিনবার করলে একটি বোনাস ভাতা পাবেন। শিশু জন্ম নেওয়ার পর ২৪ মাস পর্যন্ত মা ও শিশু ১ হাজার ৪০০ করে টাকা পাবেন। শিশুর বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিন মাস পরপর ৭০০ করে টাকা পাবে। প্রকল্প চলাকালে সুবিধাভোগীরা কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চতা, ওজনসহ নিয়মিত পরীক্ষা করাতে এলে এ অর্থ পাবেন।

উপকারভোগীদের সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা ও ইউএনওকে সভাপতি করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দল গঠন করা হয়েছে। তাঁরা ইউএনওর কাছ থেকে পাওয়া ফরম পূরণ করে ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) জমা দিলেও প্রকল্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অর্থের বিনিময়ে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে অন্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এভাবে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প থেকে বঞ্চিত কয়েকজন হলেন চাকিরপশার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আনোয়ারা বেগম ও কল্পনা বেগম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রোকসানা বেগম ও রত্না রাণী, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আছিয়া বেগম, ৬ নম্বরের ওয়ার্ডের মঞ্জিলা বেগম, উমরমজিদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদা পারভিন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লাইজু বেগম, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নুরফা বেগম, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রুবিনা বেগম ও লাকী বেগম, নাজিমখান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শিরিনা বেগম, ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ফাতেমা বেগম এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আরিফা বেগম। তাঁরাসহ দুই শতাধিক উপকারভোগী বুধবার সকালে ইউএনওর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

জানতে চাইলে ইউএনও ও প্রকল্পের সভাপতি মুহ. রাশেদুল হক প্রধান বলেন, সাতটি ইউনিয়ন থেকে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে।