ভেজাল চারায় বিপদে কৃষক

কৃষকের এক হাতের গাছে ধান ধরেছে। অন্য হাতের গাছে এখনো ধানই আসেনি। বৃহস্পতিবার নালিতাবাড়ীর নন্নী ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে।  প্রথম আলো
কৃষকের এক হাতের গাছে ধান ধরেছে। অন্য হাতের গাছে এখনো ধানই আসেনি। বৃহস্পতিবার নালিতাবাড়ীর নন্নী ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে। প্রথম আলো

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় নন্নী ইউনিয়নে খোলা বাজার থেকে ভেজাল বীজের চারা কিনে কয়েকজন কৃষক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। একই জমিতে ফসলের তারতম্য থাকায় কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাতে চাষাবাদের খরচ ও ফসল ঘরে তুলতে না পেরে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন তাঁরা। এ অবস্থায় তাঁরা চারা বিক্রেতার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো. ফজলু মিয়া ও তাঁর ছেলে মেগু মিয়া ধানের চারা বিক্রি করেন। তাঁরা খোলা বাজার থেকে হাইব্রিড তেজ গোল্ড জাতের বোরো ধানের বীজ কিনে বীজতলা তৈরি করেন। এক কেজি বীজের চারা তাঁরা এক হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তাঁদের কাছ থেকে পাঁচজন প্রান্তিক কৃষক পাঁচ কেজি হাইব্রিড তেজ গোল্ড ধানের চারা কিনে নেন। পশ্চিমপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মো. আনোয়ার হোসেন ৫০ শতক জমিতে এই চারা লাগান। তাঁর দেখাদেখি একই গ্রামের বিল্লাল হোসেন ৫০ শতক, মোজাম্মেল মিয়া ২৫ শতক, আবদুর রাজ্জাক ১৫ শতক ও শাহ আলম ৫০ শতক জমিসহ আরও কয়েকজন কৃষক ঋণ করে এই ধানের চারায় তিন একর জমিতে চাষাবাদ করেন। কৃষকেরা সঠিক মাত্রায় খেতে সেচ, সার দেন। অন্য সবার মতো তাঁদের খেতও দেখতে সুন্দর হয়। কিন্তু ধানগাছ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেতের ফসলে তারতম্য দেখা দেয়। খেতের কিছু অংশে যখন ধান পাকতে শুরু করেছে, তখন অন্য কিছু অংশে কেবল থোড় আসছে। কিছু অংশে ফুলই আসেনি।

কৃষকেরা জানান, জমির ফসলের এ রকম তারতম্য দেখে তাঁরা ফলন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। একর প্রতি ধান চাষে তাঁদের ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধারদেনা করে তিন একর জমিতে এক লাখ টাকা খরচ করে চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু শেষ সময়ে এসে খেতের ফসলের এ অবস্থায় সবাই ভেঙে পড়েছেন। ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।

গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকের আবাদি জমিতে ফলন দেখতে বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু খেতের বিভিন্ন অংশে কয়েক জাতের ধান বের হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে ধান পেকে গেছে, খেতের কিছু অংশে ধানের শিষ কেবল বের হচ্ছে। আবার খেতের কোনো অংশে ধান বেরই হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, ধারদেনা করে বোরো আবাদ করেছিলাম। অহন দেহি খেতের ধানের এহেকটা এহেক রহম। কিছু গাছে ধান পাকতে শুরু করেছে। কিছু গাছে এহনও ফুলি আইছে না। চারা বিক্রেতা আমাদের ঠকাইছে। তারা ভেজাল বীজের চারা করায় আমগর সর্বনাশ অইলো। এর ক্ষতিপূরণ ও বিচার চাই।’

ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক মোজাম্মেল মিয়া জানান, তিনি জমি বর্গা নিয়ে ২৫ শতাংশ জমিতে এই চারা আবাদ করেছিলেন। হাইব্রিড তেজ গোল্ড জাতের বীজের চারা বলে বিক্রেতা তার কাছে এক কেজি ধানের চারা এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখন খেতে ফসল হয়েছে নানা রকম। তিনি বলেন, ‘অহন ঋণ কেমনে শুধ করমু বাগিদাররে কী কইমু। চারা বিক্রেতার বিচার চাই। ক্ষতিপূরণ চাই।’

চারা বিক্রেতা ফজলু মিয়া ও মেগু মিয়ার ভাষ্য, খোলা বাজার থেকে ধানের বীজ কিনে চারা উৎপাদন করেছিলেন তাঁরা। এই চারা তাঁরা কয়েকজন কৃষকের কাছে বিক্রি করেছেন। তাঁরা নিজেরাও দুই একর জমিতে এই চারা লাগিয়েছেন। সেখানেও একই অবস্থা। তাঁরা বলেন, তাঁদের কাছ থেকে চারা কিনে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা চাইলে তারা চারার দাম ফেরত দেবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল বলেন, সাধারণত হাইব্রিড বীজ একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না। এখানে গত বছরের হাইব্রিড ধানের বীজ থেকে উৎপাদিত ধান থেকে পুনরায় বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা করা হয়েছে। তাই ফসলের তারতম্য হয়েছে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সমাধান করতে বলা হয়েছে।

ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, যাঁরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তাঁরা সবাই গরিব। বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।