পানির জন্য পাহাড়িদের শুধুই হাহাকার

কন্যাবি তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট পাগলি ছড়াটি চার মাস ধরে শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। সেটার বুকের ওপর দিয়ে চাঁদের গাড়ি ছুটছে গহিন অরণ্যে, কাঠ সংগ্রহ করতে।

আর ষাটোর্ধ্ব কন্যাবিকে প্রতিদিন ভোরে প্রায় ৩০ মিনিট পাহাড়ি পথ হেঁটে পানি আনতে যেতে হচ্ছে মৃত ছড়াটির সোঁদা অংশে খোঁড়া ছোট একটি গর্তের কাছে। গর্ত থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি বের হয়। সেই পানি বাটিতে কাচিয়ে তুলে একটু একটু করে কলসি ভরেন কন্যাবির মতো আরও অনেকে। কন্যাবি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ছোট পাগলি এলাকার বাসিন্দা। এক কলসি পানি নিয়ে প্রশান্তির হাসি হেসে কন্যাবি বললেন, ‘বেসিস্ত। ফানির হস্ত।’ অর্থাৎ বেশি কষ্ট পানির কষ্ট। শীতকাল থেকে পাহাড়ে শুরু হয় পানির কষ্ট। পানীয় জল, ধোয়ামোছাসহ নিত্যকাজের পানির আকাল থাকে বর্ষার আগ পর্যন্ত। অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে—এই ছয় মাস।

এই কষ্ট বরাবরের। তবে জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির সংকট বাড়ছে, বিশেষ করে দুর্গম এলাকায়। আর তেমন এলাকায় মূলত পাহাড়ি মানুষেরাই থাকে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগগুলো কোনো সুরাহা করতে পারছে না।

পানি সরবরাহের বিষয়টি দেখভাল করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। অধিদপ্তরের আওতায় রাঙামাটি জেলায় ৪০ শতাংশ, বান্দরবানে ৫৩ শতাংশ এবং খাগড়াছড়িতে ৫৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে পানি দেওয়া যায়। বাকিরা নির্ভর করে প্রাকৃতিক উৎসের ওপর। পানি সংগ্রহ করে নারীরা। শুকনো মৌসুমে সে এক কঠিন সংগ্রাম।

 হ্রদের জেলায় পানির আকাল

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতেই প্রাকৃতিক উৎসের ওপর নির্ভরতা সবচেয়ে বেশি। জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, রাজস্থলী ও কাউখালীতে সংকট বেশি। পানির জন্য কয়েক কিলোমিটারও চড়াই-উতরাই পার করতে হয়।

কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্যা ইউনিয়নে দেবতাছড়ি গ্রামের ৪৫টি পরিবারের বাস। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের এক দিনে সরেজমিনে দেখা যায়, পরিবারগুলোর মেয়েরা প্রায় এক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেঁটে একটি গর্ত থেকে পানি নিতে এসেছেন। আস্তরি তঞ্চঙ্গ্যা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন সকালে প্রায় দুই ঘণ্টা চলে যায় পানি এনে ঘরের কলসি এবং ড্রাম ভরতে।

সাজেক ইউনিয়নের ১৮০টি গ্রামে ৪০ হাজার লোকের বসবাস। এদের ৮০ শতাংশই শুকনো মৌসুমে পানির সংকটে ভোগে। মেয়েরা এক থেকে চার কিলোমিটার পথ হেঁটে ছড়া, ঝিরি বা ঝরনা ও কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করেন।

রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উথান মারমা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নে ১৫টি গ্রামে কোনো পাতকুয়া বা চাপকল নেই। ছড়া আর ঝিরিগুলো শুকনো। মেয়েরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ছোটখাটো পাথুরে কুয়ার পানি সংগ্রহ করছেন।

এ অঞ্চলের মানুষ পানি ফুটিয়ে পান করে না। জেলার সিভিল সার্জন শহীদ তালুকদার বলেন, শুকনো মৌসুমে ডায়রিয়াসহ নানা পেটের পীড়া দেখা দেয়।

রাঙামাটির জনসংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। এক পাশে বিশাল কাপ্তাই হ্রদ। ষাটের দশকের গোড়ায় জলবিদ্যুতের জন্য কাপ্তাই বাঁধ দেওয়া হলে হ্রদের জন্ম। জেলায় সমতল ভূমি যা ছিল, তার বড় অংশই হ্রদের নিচে।

এই হ্রদ সদর, নানিয়ারচর, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি আর জুরাছড়ি উপজেলার কিছু কিছু এলাকা ছুঁয়ে গেছে। সেখানকার মানুষেরা হ্রদের পানি পান করে। বাকিরা দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা।

হ্রদের পানি পরিশোধন করে সদর উপজেলার পৌর এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাহককে সরবরাহ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। অধিদপ্তরটি বিভিন্ন ইউনিয়নে গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে। চাপকলও দেয়। তবে সেগুলোর জায়গা ঠিক করে দেয় জেলা পরিষদ। মানুষ এ ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তোলে।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা অবশ্য প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ যেখানেই পানির সংকট রয়েছে, সেখানে চাপকল বা গভীর নলকূপ দেওয়া হয়। এগুলো বরাদ্দ তাঁরা দেন এলাকার কোনো ‘গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির’ জায়গায়।

রাঙামাটিতে অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে প্রথম আলোকে বলেন, জায়গার মালিককে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর দায়িত্ব। জেলা পরিষদের বাছাই নিয়ে মাঝেমধ্যে সমস্যা হয়।

অনুপম দে বলেন, গরমের দিনে এসব গভীর নলকূপও পানি ঠিকমতো পায় না। অনেক দুর্গম এলাকায় মাটির ৩০০ ফুটের নিচে পাথর থাকে, নলকূপ বসানোই যায় না।

অধিদপ্তরের হিসাবে, জেলায় ৫০০ গভীর নলকূপ আছে। এখন ৩৫টি বাজারে গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় দেড় হাজার চাপকল রয়েছে।

 বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৩২টি। চাপকল আছে শুধু চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

পুরো জেলায় সাকল্যে ৪২৩টি বিদ্যালয়ে চাপকল বা গভীর নলকূপ আছে। সব নলকূপ সচল নেই। আবার শুকনো মৌসুমে এর অর্ধেকে পানি ওঠে না।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বলেন, ৭৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু অবস্থানের কারণে অনেক বিদ্যালয়ে পানি দেওয়া যায় না।

রাঙামাটি শহরের আলুটিলা উলুছড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেমন পানির সরবরাহ নেই। শিক্ষার্থী আছে ৬৪ জন। তারা এক থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে পড়তে আসে। প্রধান শিক্ষক গৌরিকা তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়টি টিলার চূড়ায় হওয়ায় নলকূপ বসানো যায়নি। এক কিলোমিটার দূরের এক ডোবা থেকে শৌচাগারের পানি আনা হয়।

পাথরে মাথা কোটা

ভারতের ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী খাগড়াছড়ি জেলায় ছয় লাখের বেশি মানুষের বাস। প্রায় অর্ধেক মানুষ প্রাকৃতিক উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে। জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে শুকনো মৌসুমে পানিসংকট তীব্র হয় সদর, পানছড়ি, দীঘিনালা ও মাটিরাঙা উপজেলায়।

পানছড়ি সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরিয়ে প্যারাছড়া গ্রাম। গ্রামে ৪২টি মারমা পরিবারের বসতি। পাশের ঝিরিটি চার মাস ধরে শুকনো। এপ্রিলের গোড়ায় একটু বৃষ্টি হয়েছিল। তখন একটি গর্তে কিছু ময়লা পানি পাওয়া যাচ্ছিল। স্কুলছাত্রী আনু চিং মারমা আর কয়েকজন নারী সেখান থেকে পানি নিচ্ছিলেন।

গৃহবধূ চেইমা চিং মারমা প্রথম আলোকে বলেন, গরম এলে অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়। এখন গর্তে জমা ময়লা পানি ছেঁকে ব্যবহার করবেন।

মাটিরাঙার তবলছড়ি বাজার থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের চূড়ায় নতুন ত্রিপুরাপাড়া। পাড়ার ৪৫ পরিবার পানি আনে ২০০ ফুট নিচের একটি গর্ত থেকে। মাধবীলতা ত্রিপুরা বলেন, ভোরে পানি আনা শুরু করেন। আনতে আনতে সূর্য মাথার ওপর উঠে যায়।

বর্নাল এলাকার বড়পাড়ায় পাথরের কারণে কোনো নলকূপ বসানো যায় না। এখানকার ১০০ পরিবার ছোট্ট একটি কুয়া থেকে পানি নেয়। বর্ষায় কুয়াটি ময়লায় ভরে যায়। তখন বৃষ্টির পানিই ভরসা।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, অনেক এলাকা পাথুরে হওয়ায় নলকূপ বসানো যায় না। বেশির ভাগ বিদ্যালয়েও পানির ব্যবস্থা নেই। মোট ৬৩৭টি বিদ্যালয়ের মাত্র ২৩৪টিতে নলকূপ বসানো হয়েছে। মোট গভীর নলকূপ ও চাপকল আছে ১০ হাজারের কিছু কম।

দুর্গম, পাথুরে, প্রত্যন্ত

মিয়ানমারের সীমান্ত-লাগোয়া জেলা বান্দরবান। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিভিন্ন উপজেলায় সাত হাজারের মতো নলকূপ, গভীর নলকূপ কিংবা পাতকুয়া স্থাপন করেছে। তবে এর এক-তৃতীয়াংশের বেশি অকেজো।

সাত উপজেলার মধ্যে রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও আলীকদম দুর্গমতম। জেলার চার লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেক সরকারি-বেসরকারি পানি সরবরাহের আওতার বাইরে। তবে ওই চারটি উপজেলায় এমন অবস্থা প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের। ঝিরি, খাল ও নদীর পানিই তাদের ভরসা।

বান্দরবানে ডিপিএইচইর নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, উঁচু পাহাড়ের ভূগর্ভে পানির স্তর পাওয়া যায় না। তাই আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নে সরকারি কোনো চাপকল, পাতকুয়া বা গভীর নলকূপ নেই। একই দশা থানচি উপজেলার রেমাক্রি ও তিন্দু ইউনিয়ন এবং রুমা উপজেলার রেমাক্রি প্রাংসা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায়। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদও গ্রীষ্মে শুকিয়ে যায়।

পানি নিয়ে দুর্ভোগ বেশি বম ও খুমিদের। বমপাড়াগুলো সচরাচর পাহাড়ের চূড়ায় থাকে। রুমা উপজেলার মুননুয়ামপাড়ায় উঠতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা লাগে। পাড়াবাসী নারী পারথেন বম বলেন, প্রায় এক হাজার ফুট পাহাড়ের খাদে নেমে একবার পানি নিতে গেলে অন্য কাজ করার শক্তি আর থাকে না।

এ পাড়ায় দুই কিলোমিটার দূরের আরও উঁচু পাহাড়ের ঝিরি থেকে নল দিয়ে পানি টেনে একটি চৌবাচ্চা বা ট্যাংকে জমানোর ব্যবস্থা (জিএফএস) করা হয়েছে। ১১৫ পরিবারের পাড়ায় পানির লাইনে দাঁড়ালে ঘণ্টা পেরিয়ে যায়।

আর্থাহ্পাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য লালচন সাং বম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পাড়া ব্রিটিশ আমলের। তখন থেকে একই ঝিরির পানি তাঁরা ব্যবহার করছেন। ঝিরি প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে। শুকনো মৌসুমে পানি কিছুটা দূষিত হয়।

খুমিরাও উঁচু পাহাড়ে থাকে। রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে ৩৮টি পাড়ায় প্রায় আড়াই হাজার খুমির পানির সমস্যা প্রায় একই রকম।

রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে দুর্গম চাইরাগ্র পাড়া। কাছের ঝিরিটি শুকিয়ে যাওয়ায় মেয়েরা উঁচু–নিচু কয়েকটি পাহাড় পেরিয়ে এক কিলোমিটার দূরের আরেকটি ঝিরি থেকে পানি আনেন।

থুইসা অং মারমা আর প্রুসা অং মারমার ধারণা, পানির উৎস থেকে পাথর তুলে নেওয়ায় এবং আশপাশের বন উজাড় হওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। প্রবীণ চসানু মারমা বলেন, ৩০ বছর আগে তাঁরা পাশের কায়াম্রং ঝিরির পানি ব্যবহার করতেন। এখন তা শুকিয়ে যাচ্ছে।

ম্রোদের প্রধান বসতি চিম্বুক পাহাড়ে। এখানেও ক্রমাগত বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে, ঝিরির পাথর তুলে নেওয়া হচ্ছে। এতে পানির উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে। পাড়াগুলোর এক কিলোমিটার চৌহদ্দির মধ্যে ঝিরিতে পানি এতই কম যে নল দিয়ে ওপরে তোলা যায় না।

সমাধান কী?

২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মুহিববুল্লাহ পাহাড়ে সুপেয় পানির সংকট নিয়ে একটি গবেষণায় নেতৃত্ব দেন।

মুহিববুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শুকনো মৌসুমে পাহাড়ে পানির সংকটের কয়েকটি কারণ আছে। বৃষ্টি কম হয়, পানির স্তর নিচে নেমে যায়, নলকূপে পানি আসে না আর ছড়া শুকিয়ে যায়। আবার বন-পাহাড়ে লাগানো কিছু গাছপালা অনেক পানি টেনে নিচ্ছে।

গবেষণাটি বলছে, পাহাড়ধস এবং জনবসতি বাড়ার কারণে অনেক পানির উৎস ধ্বংস হয়ে গেছে। কিছু ঝরনা শুকিয়ে গেছে। এখন বৃষ্টির পানি ধরে রাখা আর কাপ্তাই হ্রদের পানি নল দিয়ে সরবরাহের আওতা বাড়ানো জরুরি। আর ঝিরি-ছড়াগুলো বাঁচাতে হবে। তাহলে পাহাড়ের যেকোনো পাড়া-গ্রামে পানি পৌঁছানোর কাঠামো গড়ে তোলা যাবে। (শেষ)

(তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সাধন বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি; জয়ন্তী দেওয়ান, খাগড়াছড়ি এবং বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, বান্দরবান)