অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির এখন কী হবে?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহের নান্দাইলে ধর্ষণের শিকার ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে নয় মাস ধরে দুঃসহ জীবন পার করেছে। বর্তমানে সে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রহর গুনছে। অথচ এই সময়ের মধ্যেও ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ফলে এ ঘটনায় কিশোরীটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে এক অনিশ্চয়তা। জন্ম নিতে যাওয়া সন্তান ও তার কিশোরী মায়ের আগামী দিনগুলো কেমন হবে, সেই আশঙ্কায় দিশেহার মেয়েটির পরিবার।

কিশোরীর বড় বোন প্রথম আলোকে বলেন, ছোট বোনের সন্তানটি জীবিত থাকলে তিনি নিয়ে লালন-পালন করবেন, কিন্তু এই সমাজ তাঁর কিশোরী বোনটিকে কী চোখে দেখবে?

কিশোরীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের ঘটনা জানার পরপরই তারা বিচারের দাবিতে গ্রামের বিভিন্নজনের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় তাদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে বিচার চাইতে গেলে তারা নানাভাবে কালক্ষেপণ করেছে। ফলে কিশোরীর বাবা গত ২৫ এপ্রিল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় দুই কিশোরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সালিসের নামে কালক্ষেপণ করে ধর্ষণের ঘটনার আলামত নষ্ট করার অভিযোগে ২৫ এপ্রিল করা মামলার আসামিদের সঙ্গে পুলিশ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করেছে। পুলিশ যাদের অভিযুক্ত করেছে তাদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক ইউপি সদস্যসহ আটজনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান ইউপি সদস্যসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। কিন্তু মূল আসামি দুই কিশোরের একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি তারা।

কিশোরদের গ্রেপ্তার করতে না পারার বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নান্দাইল মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ রুহুল কদ্দুছ খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষকদের ধরার জন্য তিনি ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু তাদের পাননি।

কিশোরীর পরিবার জানায়, কয়েক মাস আগে কিশোরীটি বাড়ির উঠান পেরিয়ে টেলিভিশন দেখার জন্য চাচার বাড়ি যাচ্ছিল। এ সময় অষ্টম শ্রেণিতে পড়া প্রতিবেশী দুই কিশোর তার গলায় ছুরি ধরে ঘরের পেছনে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে। চলে যাওয়ার সময় তারা হাতের ছুরি দেখিয়ে শাসিয়ে যায়, এ ঘটনা প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। এতে ভয় পেয়ে ওই কিশোরী ঘটনাটি কারও কাছে প্রকাশ করেনি। কিন্তু কিশোরীর শারীরিক পরিবর্তন শুরু হলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

কিশোরীর বাবা পেশায় শ্রমজীবী। তিনি প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, সন্তানের মুখে এ ঘটনা শোনার পর বিচারের দাবিতে তিনি স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে ধরনা দেন। কিন্তু এক প্রভাবশালী এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয় এমন এক কিশোরের নাম যুক্ত করতে বলেন। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় প্রভাবশালীরা নানা ছুতোয় বিচারের নামে কালক্ষেপণ করেন। পরে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রকাশ হলে পুলিশ তৎপর হয়। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা এখনো ধরা না পড়ায় তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বলে তিনি জানান।