জামালপুরে ধর্ষণের অভিযোগে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

জামালপুর সদর উপজেলায় এক তরুণীকে (১৯) ধর্ষণের অভিযোগে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে সদর থানায় এই মামলা দায়ের হয়। গতকাল শুক্রবার ‘ভুক্তভোগী’ তরুণী সন্তানের জন্ম দিলে বিষয়টি প্রকাশ পায়।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মাজেদুল ইসলাম (৪০)। তিনি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে কর্মরত। তাঁর বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে।

ভুক্তভোগী তরুণীর ভাষ্য, তিনি ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বাসায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে মাসে কাজে যোগ দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় তাঁকে ধর্ষণ করেন ওই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে গত শুক্রবার সাত মাসের এক মেয়ে সন্তান প্রসব করেন তিনি। তবে জন্মের পরই নবজাতকটি মারা যায়। সন্তান প্রসবের পরই ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ পায়।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক আগে ওই তরুণীর বাবা মারা যান। তাঁর পরিবার খুবই দরিদ্র। তাঁর মা ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বাড়িতে কাজ করতেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মায়ের পরিবর্তে তরুণী ওই বাড়িতে কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়িতে একা পেয়ে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে না বলতে হুমকিও দেন। এরপর থেকে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তাঁকে ধর্ষণ করে আসছিলেন।

এজাহারে বলা হয়, ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কৌশলে ওই তরুণীকে গত ৮ মার্চ বিয়ে দেন শিক্ষা কর্মকর্তা। বিয়ের দুই মাসের মাথায় গতকাল তিনি সাত মাসের একটি মেয়ে শিশু প্রসব করেন। যা জন্মের পরপরই মারা যায়। এ সময় শ্বশুরবাড়ির লোকজন ওই তরুণীকে তাড়িয়ে দেন। এরপরই গ্রামের লোকজনের কাছে বিষয়টি প্রকাশ পেলে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এদিকে ঘটনাটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। আইনি সহায়তা পেতে স্থানীয় লোকজনই ওই তরুণীকে থানায় নিয়ে আসেন। এ ঘটনার পর ওই কর্মকর্তা ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন।

দুপুরে থানায় ওই তরুণীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কোনো ভাইবোন নেই। আমি আর আমার মা ছাড়া কেউ নাই। কাজ করেই আমরা কোনো রকম চলতাম। আমার মা ওই বাড়িতে কাজ করতেন। মায়ের পরিবর্তে ওই বাড়িতে আমি কাজ শুরু করি। তাঁর (শিক্ষা কর্মকর্তা) স্ত্রী স্কুলের চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে সপ্তাহের শনিবার বাড়িতে কেউ থাকত না। শুধু তিনি (শিক্ষা কর্মকর্তা) থাকতেন। সে সুযোগে তিনি আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করতেন। প্রথম দিকে আমাকে নেশাজাতীয় দ্রব্যও খাইয়ে ধর্ষণ করত। এসব বিষয়ে আমি বাধা দিলে তিনি আমাকে হুমকিও দিত। তারা আমাকে বিয়েও দিয়েছিল। পেটে বাচ্চা হওয়ার পর আমাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা খুব দরিদ্র মানুষ। এখন আমার কী হবে। আমি আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

পলাতক থাকায় এ ব্যাপারে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। আজ বিকেলের দিকে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবজাতকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। নবজাতকের ডিএনএ টেস্ট করার আবেদন করা হয়েছে।’

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় ওই তরুণী বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে আসামি পলাতক রয়েছেন। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে।’