একজন সফল মায়ের গল্প

জোহরা আনিস
জোহরা আনিস

১৯৮৯ সালের কথা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী মিনুয়ারা বেগমকে জোর করে বিয়ে করতে চান এক আত্মীয়। মিনুয়ারার বাবা আবদুল হাই তাঁর খালাতো বোন জোহরা আনিসকে বিষয়টি জানান। জোহরা আনিস তখন কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। তিনি উদ্যোগী হয়ে ওই বিয়ে বন্ধ করেন। এরপর ১৯৯১ সালে মিনুয়ারা এসএসসি পাস করে। পরে তাঁকে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি করান জোহরা। এরপর মিনুয়ারাকে নিজ বাসায় রাখেন। সেখান থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাস করেন মিনুয়ারা। তিনি এখন একটি সরকারি কলেজের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। শুধু মিনুয়ারা নন, এ রকম বহু ছেলেমেয়েকে পড়াশোনার ব্যবস্থা ও খরচের জোগান দেন জোহরা আনিস। তাঁদের পাশে থেকে সাহস দেন। জোগান আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার অনুপ্রেরণা।

নারীশিক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য জোহরা আনিসকে গত বছর সরকার বেগম রোকেয়া পদকে ভূষিত করে। ওই পদকের সম্মানীর ২ লাখ টাকাই তিনি নবীনগরের গুড়িগ্রাম ফাতেমা কুদ্দুস ফাউন্ডেশনকে দান করেন। তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ অক্টোবর অবিভক্ত কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার নবীনগর উপজেলার গুড়িগ্রামে। পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তাঁর বাবা আবদুল কুদ্দুস ও মা ফাতেমা বেগম শিক্ষক ছিলেন। জোহরা আনিস ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৩ সালে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। তিনি ২০০৪ সালের ১৩ অক্টোবর একই কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসরে যান। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবসে নারীশিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদান রাখায় তাঁকে রাষ্ট্রীয় রোকেয়া পদক দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মা হিসেবেও জোহরা আনিস সফল। তাঁর বড় মেয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবেদা কনক খান, ছোট মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান। ছেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফ মোর্শেদ খান। সফল মা হিসেবে ২০০৬ সালে আজাদ প্রোডাক্টস সম্মাননা ও ২০১০ সালে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে কুমিল্লা গণিত ক্লাব সম্মাননা পেয়েছেন জোহরা আনিস। এ ছাড়া নারী দিবস ও মা দিবসে বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাঁকে সম্মাননা ও পদক দেয়।

 গতকাল শনিবার সকালে কুমিল্লা নগরের ঝাউতলা এলাকায় তাঁর বাসায় কথা হয় জোহরা আনিসের (৭২) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একজন মা-ই পারেন পুরো পরিবারকে বদলে দিতে। পুরো এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে। এ জন্য সততা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রম এবং ধৈর্য লাগবে। শর্টকাট করে জীবনে উন্নতি করা যায় না। যে মা তাঁর এবং আশপাশের সন্তানদের হাতে বই তুলে দেন। অসহায়দের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন, তিনিই আলোকিত মা। আমি আমার সন্তানদের বাইরে অন্যদেরও নিজের সন্তান মনে করি। তাদের সাফল্যে গর্ববোধ করি।’