শিক্ষার্থী পরিবহনে পুরোনো ৩টি বাস বিড়ম্বনায় শিক্ষার্থীরা

কারমাইকেল কলেজ। ফাইল ছবি
কারমাইকেল কলেজ। ফাইল ছবি

রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজে প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো মাত্র তিনটি ছোট-বড় বাস দিয়ে কোনোরকমে শিক্ষার্থী আনা-নেওয়া চলছে। কলেজের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এই বাস প্রায়ই বিকল হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তাঁদের দাবি, জেলার তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা ও মিঠাপুকুর—এই পাঁচ উপজেলা থেকে শিক্ষার্থী আনা নেওয়ার জন্য অন্তত ১০টি বাস চালু করা হোক।

ওই কলেজ সূত্রে জানা গেছে, এ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৮টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরসহ বিভিন্ন কোর্সে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এর বিপরীতে বাস মাত্র তিনটি। এর মধ্যে দুটি বাস ৫২ আসনের। আর অন্যটি ২৮ আসনের ছোট বাস। এসব যানবাহন ’৮৭ সালে কেনা। এর মধ্যে ৫২ আসনের বাস দুটি সদর উপজেলার পাগলাপীর এলাকা পর্যন্ত চলাচল করে আসছে। আর ২৮ আসনের বাসটি নগরের বুড়িহাট এলাকা পর্যন্ত চলাচল করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের বাড়ি থেকে কলেজ যাওয়া-আসা করে থাকেন। কলেজ থেকে পাঁচটি উপজেলার দূরত্ব ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। বেশির ভাগ এলাকায় কলেজের বাস সার্ভিস না থাকায় শিক্ষার্থীর প্রতিদিন কলেজে যাওয়া-আসা করতে প্রায় ১০০ টাকা ব্যয় হয়। আর শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় পরিবহন বাবদ ২০০ টাকা নেওয়া হয়।

৫২ সিটের একটি বাসের চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, চালাতে গিয়ে প্রায়ই পুরোনো এই বাস রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। তখন তাঁকেসহ শিক্ষার্থীদের মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ৫২ সিটের অপর বাসের চালক আকবর হোসেন বলেন, ‘গাড়ি চালাতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এত পুরোনো গাড়ি আর কত দিন চলবে?’

কলেজ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কাউনিয়া উপজেলার মীরবাগ বাজার এলাকা থেকে প্রতিদিন অন্য পরিবহনে যাতায়াত করেন—এমন কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, কলেজের বাস ছাড়া অন্য গাড়িতে যাওয়া-আসা করতে অনেক টাকা লাগে। যা অনেকের পরিবারের পক্ষেই বহন করা সম্ভব হয় না। তাঁদের অনেকেই টিউশনি করে এই খরচ মেটান।

১৫ কিলোমিটার দূরে মিঠাপুকুরের বলদিপুকুর এলাকার অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে এই রুটে বাস চালু করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সেই দাবি বছরের পর বছর ধরে মানা হচ্ছে না।’

নগরের বুড়িরহাট এলাকা থেকে চলাচলকারী ২৮ সিটের আসনের বাসে শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলান হয় না। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, বাসে জায়গা পাওয়া যায় না। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে কষ্টে যাতায়াত করতে হয় তাঁদের। বুড়িরহাট এলাকার শিক্ষার্থী নূর-ই আলম জানান, এখান থেকে সরাসরি কোনো পরিবহন নেই। অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে কলেজে যাওয়া-আসায় ৫০ টাকা লেগে যায়।

বাসের সংখ্যা বাড়ানোসহ নানা সুযোগ-সুবিধার দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কলেজ শাখার নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন। সংগঠনটির কলেজ শাখার সভাপতি অসীমা রায় লিপি বলেন, ‘এত বড় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক পুরোনো লক্করঝক্কর বাস এখনো চলাচল করছে। নতুন করে বাস বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আমরা ইতিমধ্যে অনেক আন্দোলন ও অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু সেই দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে।’

পরিবহন সমস্যার কথা স্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ প্রথম আলোকে বলেন, যে তিনটি বাস আছে তাও অনেক দিনের পুরোনো। তা চালাতে প্রায় সময় মেরামত করতে হয়। নতুন বাস বরাদ্দের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।