শত বছরের সংঘের মাঠ দখলের চেষ্টা

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামের তরুণ সংঘের বয়স ১০১ বছর। সংঘের কার্যালয় কক্ষের সামনেই খেলার মাঠ। নিয়মিত খেলাধুলা-গানবাজনা হয় এখানে। এই সংঘের ছেলেরা আন্তজেলা ক্রীড়ায় অংশ নিয়ে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে।

দখলের উদ্দেশ্যে সেই সংঘের সামনের জায়গা মোটা তার দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন পুলিশের এসআই মোস্তাফিজুর রহমান ও তাঁর পরিবারের লোকজন। এতে বন্ধ হওয়ার পথে খেলাধুলা, হারিয়ে যেতে বসেছে সংঘের কার্যালয় ভবন ও খেলার মাঠের সৌন্দর্য।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও ওই সংঘের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার বজরাপুর গ্রামে সংঘটি অবস্থিত। ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংঘটি খেলাধুলার পাশাপাশি গ্রামের নানা সামাজিক কাজে ভূমিকা রাখছে। মাত্র ১১ সদস্য নিয়ে গঠিত এই সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মৃত মন্টু ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কানাই লাল দত্ত। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সংঘটি এগিয়ে চলেছে। সামাজিক নানা কাজে সংঘের সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। নিয়মিত খেলাধুলা আর গানবাজনা করেন। এই তরুণ সংঘের ফুটবল দল এলাকায় শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত। তারা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই সংঘের খেলোয়াড় আসানুর রহমান ও মিরাজুল ইসলাম ফুটবলজগতে এক পরিচিতি নাম।

সংঘটির বর্তমান সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আলী জান্নাত ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন। মমতাজ উদ্দিন বলেন, এ সংঘের ১০ শতক নিজস্ব জমি রয়েছে। এ ছাড়া সামনে ৬ শতক সরকারি খাসজমি রয়েছে। তাঁরা নিজস্ব জমির এক প্রান্তে অফিসঘর করেছেন। এ ছাড়া বাকি জমি ও সরকারি ৬ শতক খাসজমিতে রয়েছে খেলার মাঠ। যে মাঠটি মাটি দিয়ে উঁচু করে বাঁধানো। খেলার মাঠের মাটি যেন বৃষ্টির পানির স্রোতে চলে না যায়, সে জন্য চারপাশ ইট দিয়ে দেয়াল করে দেওয়া আছে। সেখানেই গ্রামের ছেলেরা খেলাধুলা করে। এখানে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিনি আরও জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে হঠাৎ করে ক্লাবঘরটির পাশের বাসিন্দা এসআই মোস্তাফিজুর ও তাঁর পরিবারের লোকজন শ্রমিক লাগিয়ে তার দিয়ে জায়গাটি ঘিরে দেন। সেখানে গাছও লাগিয়েছেন। এ অবস্থায় তাঁরা প্রতিবাদ করলে মোস্তাফিজুর প্রথম দফায় তারগুলো সরিয়ে ফেলেন। এরপর মার্চের মাঝামাঝিতে আবারও তিনি তার দিয়ে জায়গাটি ঘিরে দেন। পাশাপাশি তরুণ সংঘের দেওয়া সীমানাপ্রাচীর তিনি ভেঙে দিয়েছেন। এ অবস্থায় তাঁদের সংঘের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ছেলেদের খেলাধুলাও বন্ধ হওয়ার পথে। যাঁরা খেলার মাঠ তার দিয়ে ঘিরে দখলের চেষ্টা করছেন, তাঁদের বাড়ির সীমানার মধ্যেও খাসজমি রয়েছে।

জানতে চাইলে এসআই মোস্তাফিজুর বলেন, ‘যে জায়গা আমরা ঘিরে দিয়েছি, সেখানে আমাদের ক্রয়কৃত ৩ শতক জমি আছে। এ ছাড়া খেলার মাঠের মধ্যে থাকা আরও ৬ শতক জমি ডিসিআর সূত্রে আমরাই মালিক। কিন্তু সংঘের লোকজন আমাদের ক্রয় করা জমিও দখল করে নিয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছিলেন। যে কারণে আমরা জমিটি নিজেদের দখলে রাখতে তার দিয়ে ঘিরে দিয়েছি। সংঘটি যেন জায়গাটিতে স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে, সে জন্য আমরা আদালতে একটি মামলা করেছি। আদালত এর জবাব দিতে বিবাদী পক্ষকে নোটিশ দিয়েছেন।’