স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

দুদক
দুদক

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে আসবাব কেনার নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। আজ রোববার রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের একটি দল। এর আগে সেখানে গিয়ে অভিযোগসংশ্লিষ্ট নথিও সংগ্রহ করে সংস্থাটি।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের চট্টগ্রাম ২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহবুবুল আলমকে দলনেতা ও সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশকে সদস্য করে দুই সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। এই দলটিই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়ে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাড়া আরও যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁরা হলেন, অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর আবদুর রশীদ, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. ইউনুস, উপ-কর্মসূচি ব্যবস্থাপক কামরুল কিবরিয়া ও প্রধান সহকারী আবদুল মালেক। তবে উচ্চমান সহকারী খায়রুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি অফিসে উপস্থিত ছিলেন না।

এর আগে সেখানে উপস্থিত হয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে আসবাবপত্র ক্রয়সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি, মেডিকেল কলেজে ফার্নিচার ক্রয়সংক্রান্ত আইন-বিধি ও নীতিমালার কপি সংগ্রহ করে দুদকের দলটি।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আসবাব কেনার জন্য ২০ কোটি ৮৫ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ টাকার প্রশাসনিক অনুমোদনসহ বরাদ্দ চান। চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের প্রশাসনিক প্ল্যানে তাঁদের জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। তারপরও মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ থেকে ওই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেওয়াসহ প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাওয়া প্রস্তাব সুপারিশসহ অগ্রবর্তী করা হয়। নথিতে ওই ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সই করেন।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অনুসন্ধান দলের প্রধান দুদকের চট্টগ্রাম-২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে আসবাবপত্র কেনার মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের আসবাবপত্র কেনার জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটিকে ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। আরেক প্রতিষ্ঠানের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, আসবাবপত্র কেনার জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। তারপরও মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ থেকে টাকা বরাদ্দ দেওয়াসহ প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেন মহাপরিচালকসহ জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আসা ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সই করেছেন। তাঁর মতে, এখানে দুর্নীতি হয়েছে, সেটা স্পষ্ট।

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা জানান, অনুসন্ধান দলের পক্ষ থেকে কমিশনে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। সেই প্রতিবেদন বিবেচনা করে কমিশন যে নির্দেশনা দেবে সে অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের কাছে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বিষয়ে আমার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আমি যেন সহযোগিতা করি। তারা আমার বক্তব্য চেয়েছে, আমি বক্তব্য দিয়েছি। আমি আগেও সহযোগিতা করেছি, এখনো করব। তখন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগে যাঁরা দায়িত্বরত ছিলেন, তাঁদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।’

এর আগে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে সরকারের সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার সাবেক হিসাবরক্ষক আবজাল হোসেন, তাঁর স্ত্রীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর আবদুর রশীদ এবং মেডিকেলটির সাবেক ও বর্তমান অধ্যক্ষকেও আসামি করা হয়।