মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক মঙ্গলবার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার আরও সুদৃঢ় করার বিষয়ে আলোচনা করতে প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী কুলাসেগারনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রতিমন্ত্রী গতকাল শনিবার মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আজ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।

প্রতিমন্ত্রীর এই সফরকালে বুধবার মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশ সফর এবং পরের দিন বৃহস্পতিবার সারাওয়াক প্রদেশের গভর্নরের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে শনিবার তিনি কুয়ালালামপুরের একটি হোটেলে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতাদের আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন ইমরান আহমদ। মালয়েশিয়াকে বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি ইফতারপূর্ব আলোচনা সভায় প্রবাসীদের কল্যাণে সরকারের পাশাপাশি কমিউনিটিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

আজ রোববার মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে মালাক্কায় মতবিনিময় করার কথা রয়েছে ইমরান আহমদের। আগামী সোমবার মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন পরিদর্শন করবেন এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন এবং উপসচিব আবুল হোসেন প্রতিমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় আট মাসেরও বেশি সময় নতুন কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। এতে অন্তত এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন প্রক্রিয়া চালু করতে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) একাধিকবার বৈঠক করলেও সংকটের সুরাহা হয়নি। অভিযোগ তদন্তে মালয়েশিয়া সরকারের গঠিত স্বাধীন কমিটি ইতিমধ্যে একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে উচ্চ আদালত ছয় মাসের মধ্যে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিলেন মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু সেই সময়সীমা পার হয়ে গেছে। এখন মন্ত্রণালয় সময় বাড়ানোর আবেদন করবে বলে জানা গেছে। গত বছর মাঠে নামলেও থমকে আছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান। বরং পুনরায় এ বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে ওই সংঘবদ্ধ চক্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গত বছর একতরফা ও অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশের ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে। এই ১০ এজেন্সি সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিতি পায়। এর সঙ্গে জড়িত দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি লোকজন। এই চক্রের বিরুদ্ধে সরকারি খরচের অতিরিক্ত ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে কোনো বাংলাদেশি কর্মীকে ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। তবে এর আগে ভিসা পাওয়া কর্মীরা সেপ্টেম্বরের পরও মালয়েশিয়া গেছেন। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন।

গত বছরের প্রথম তিন মাসে কর্মী গেছেন ৩৮ হাজার ৮৬৫ জন। এ বছরের প্রথম তিন মাসে গেছেন মাত্র ৫৫ জন। অথচ গত বছর প্রতি মাসে গড়ে কর্মী গেছেন প্রায় ১৫ হাজার। এ হিসাবে বাজার চালু থাকলে গত ৮ মাসে নতুন করে এক লাখের বেশি কর্মী চাকরি পেতেন বলে মনে করেন শ্রমবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে এখন বাজার চালু করায় সরকারের মনোযোগ বেশি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক।