আদালতে স্বীকারোক্তি: বাসচালকসহ তিনজন শাহিনুরকে ধর্ষণ করেন, পরে হত্যা করা হয়

শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়া। ছবি: সংগৃহীত
শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়া। ছবি: সংগৃহীত

নার্স শাহিনুর আক্তারকে বাস থেকে ফেলে হত্যার আগে চালক নুরুজ্জামান, তাঁর সহকারী লালন মিয়াসহ তিনজন ধর্ষণ করেন। তখন রাত সাড়ে আটটা। এ ঘটনা ঘটানো হয় ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের বাজিতপুরের বিলপাড় গজারিয়া এলাকার একটি কলাবাগানে।

ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে শনিবার রাতে আদালতে ১৬৪ ধারায় এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বাসটির চালক নুরুজ্জামান নুর।

স্বীকারোক্তি রেকর্ড করেন কিশোরগঞ্জ আদালতের অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম আল মামুন। আট দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদের চতুর্থ দিনে জবানবন্দি দিলেন নুরুজ্জামান। এর আগে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে নুরুজ্জামানকে আদালতে হাজির করা হয়।

আজ রোববার বিকেলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে এই সাংবাদ সম্মেলন হয়। এতে পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদসহ ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে নুরুজ্জামানের স্বীকারোক্তির কথা জানানো হয়। নুরুজ্জামানের স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ধর্ষণ ও হত্যায় অংশ নেন নুরুজ্জামান, লালন, আল আমিনসহ কয়েকজন। শাহিনুর হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আল আমিন পলাতক। ঘটনার দিন তিনিই শাহিনুরকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে পালিয়ে যান। জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, দায় এড়াতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিক কৌশল আঁটেন। কৌশল হিসেবে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিতে শাহিনুরকে ফের বাসে তোলা হয় এবং পরে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা দেওয়া হয়। আবার তাঁরাই সড়ক থেকে তুলে এনে চিকিৎসা করানোর জন্য এখানে-সেখানে নিয়ে যান। শেষে নিয়ে যান কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

ডিআইজি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে আট দিন রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। বাজিতপুর থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাসটি জব্দ করা হয়েছে। সড়কে চলাচলের জন্য বাসটির অনুমতি ছিল না। এই পাঁচজনের মধ্যের নুরুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করায় প্রথমে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। নুরুজ্জামান স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেছেন, শাহিনুর বিকেলে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় স্বর্ণলতা কাউন্টার থেকে তাঁর বাসের আরোহী হয়েছিলেন। নুরুজ্জামানকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের রাখা হয়েছে বাজিতপুর থানা হেফাজতে।

ডিআইজি আরও বলেন, হত্যার পর শাহিনুরের খোয়া যাওয়া প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ধর্ষণের আলামত সংরক্ষণ করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শাহিনুর ইবনে সিনা হাসপাতালে ঢাকার কল্যাণপুর শাখায় নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাড়ি কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে। ঢাকা থেকে পিরিজপুরের মধ্যে চলাচলকারী স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসযোগে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে শাহিনুরের মৃত্যু হয়। গত সোমবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শাহিনুরের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চালক নুরুজ্জামান নুর, তাঁর সহকারী লালন মিয়াসহ গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার লোহাদি গ্রামের রফিকুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ভোগপাড়া গ্রামের খোকন মিয়া ও বাজিতপুর উপজেলার নিলক্ষ্মী গ্রামের বকুল মিয়াকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয় হয়।  স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর বাসচালককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।