সম্মাননা পেলেন কৃতী সন্তানের মায়েরা

কৃতী সন্তানের মায়েদের সম্মাননা দেওয়া হয়। ঢাকা, ১২ মে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
কৃতী সন্তানের মায়েদের সম্মাননা দেওয়া হয়। ঢাকা, ১২ মে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

রাবিয়া আলম মাধ্যমিক পাস করেন ১৯৬৬ সালে। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির আগেই ১৯৬৯ সালে বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। অবশ্য তত দিনে তিনি স্কুলশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মিউনিসিপ্যাল স্কুলে। পরে ১৯৮৭ সালে বরিশাল নাইট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। সেই স্কুল থেকেই পাস করেছেন তাঁর তিন সন্তান অধ্যাপক শেখ মো. মুরছালীন মামুন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মোহাম্মদ মুসাহিদ মাসুম ও মেজর শেখ মো. মুজাহিদ মনির। রত্নগর্ভা মায়ের এই সন্তানেরা তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন মাকে সম্মাননা জানানোর আয়োজনে। এ রকম কৃতী সন্তানের ৩৫ জন মাকে রোববার দেওয়া হয়েছে সম্মাননা।

ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে ছিল ‘রত্নগর্ভা মা-২০১৮’ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন আমি মাকে হারাই। এ রকম এক রোজার সময়ে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। বেঁচে থাকলে আজ তিনিও হয়তো এই সম্মাননা পেতেন। আজ এখানে যাঁরা উপস্থিত তাঁরা সবাই আমার মা। আপনাদের সন্তানদের সাফল্যের পেছনে আপনারা আছেন। আজ দেশ যেখানে পৌঁছেছে, এর পেছনে আপনাদের অবদান রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংসদ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। আয়োজক আবুল কালাম আজাদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী, মন্ত্রী, আমলাকে দেখেছি নিজে সম্মাননা নেওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকেন। ব্যতিক্রম পেলাম আজাদ ভাইকে। তিনি মায়েদের সম্মান দেওয়ার আয়োজন করেছেন। এই উদ্যোগ অন্যদের জন্য শিক্ষামূলক। একজন রিকশাচালক, দিনমজুরও চান মায়েরা তাঁদের সঙ্গে থাকুক। সবারই সে রকম করা উচিত। আমার প্রত্যাশা পৃথিবীর সব বৃদ্ধাশ্রম একদিন বন্ধ হয়ে যাবে।’

সম্মাননাপ্রাপ্ত কৃতী সন্তানের গুণী মায়েরা। ঢাকা, ১২ মে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
সম্মাননাপ্রাপ্ত কৃতী সন্তানের গুণী মায়েরা। ঢাকা, ১২ মে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান আজাদ প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘মায়েরা অনুপ্রাণিত হলে দেশ অনুপ্রাণিত হবে। এ জন্য আমরা মায়েদের অনুপ্রাণিত করার এ আয়োজনটি করেছি। আমি সারা বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি। সাত বছর বয়সে আমি মাকে হারিয়েছি। আজ আমার সামনে অনেক মা বসে আছেন, এটা আমার জন্য অন্য রকম এক আনন্দের মুহূর্ত।’

ঢাকার এইচ অ্যান্ড এম-এর মারচেন্ডাইজার রায়হান কামাল বলেন, ‘এ রকম একটি আয়োজন করে আমাদের মা রিজিয়া কামালকে সম্মান জানানোর জন্য আজাদ আবুল কালামকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আজকের দিনের নতুন মা যাঁরা, তাঁরা যেন আজকের পুরস্কৃত মায়েদের অনুকরণ করেন।’

সন্তানদের বড় করার জন্য শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে দিয়েছিলেন আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘সন্তানদের ছেলে বা মেয়ে হিসেবে নয়, সন্তান হিসেবেই দেখতাম। তারা ক্যাডেট কলেজে পড়েছে। আজ তারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে। তিন ছেলেমেয়েই ডাক্তার।’ তাঁর মেয়ে চিকিৎসক সুমনা ফেরদৌস বলেন, ‘মাকে নিয়ে আমরা সব সময় গর্বিত ছিলাম। মা আমাদের খুব সুন্দর শৈশব ও কৈশোর উপহার দিয়েছেন। আমাদের মা এত গুণে গুণান্বিতা যে, আমরা কখনোই তাঁর মতো মা হতে পারব না।’

এ বছর এই আয়োজন থেকে ‘মাই ড্যাড ওয়ান্ডারফুল’ সম্মাননা পাওয়া আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘অনেক ভুল রাজনীতি, অপরাজনীতির পরও দেশটা আজ যে এখানে এসে পৌঁছেছে, তাতে এই মায়েদের অনেক অবদান রয়েছে। তাঁরা সন্তানদের সৎ থাকতে বলেছেন, সন্তানদের তাঁরা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ভালো মানুষ না হলে সোনা দিয়ে মুড়ে দিলেও সমাজ এগোবে না।’

এই আয়োজনে ‘মাই ড্যাড ওয়ান্ডারফুল’ সম্মাননা পান কবি আসাদ চৌধুরী। ঢাকা, ১২ মে। ছবি: সাইফুল ইসলাম
এই আয়োজনে ‘মাই ড্যাড ওয়ান্ডারফুল’ সম্মাননা পান কবি আসাদ চৌধুরী। ঢাকা, ১২ মে। ছবি: সাইফুল ইসলাম

অনুষ্ঠানে কবি আসাদ চৌধুরী প্রস্তাব করেন, এই আয়োজন উপলক্ষে মাকে নিয়ে গান লেখার একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হোক। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার ও সম্মাননাও দেওয়া উচিত। তাৎক্ষণিকভাবে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন আয়োজক আবুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য দেন আবুল কালাম আজাদের ছেলে জিয়াউর রহমান আজাদ ও মেয়ে অনামিকা আজাদ শ্রাবণী। বাবার অবর্তমানে তাঁর এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে গান করেন দিনাত জাহান মুন্নী ও শামীম আরা মুন্নী।

এ বছর সাধারণ বিভাগে সম্মাননা পেয়েছেন ২৫ জন এবং বিশেষ বিভাগে ১০ জন মা। সাধারণ বিভাগে রত্নগর্ভা অ্যাওয়ার্ড পাওয়া মায়েরা হলেন ফাতেমা ইসলাম শিরীন, রওশনারা বেগম, রহিমা খাতুন, আপেল রাণী সাহা, হামিদা রাজ্জাক, মমতা বেগম, দৌলত আরা বেগম, হোসনে আরা বেগম, কাজী জাহানারা হোসেন, বেগম সালেহা হক, আয়েশা খাতুন, নূরুননেছা, আফিয়া সোলায়মান, বেগম ফজিলাতুন্নেছা, রোমেলি বড়ুয়া, রাবিয়া আলম, মনোয়ারা বেগম, সেলিন ডি কস্তা, জোহরা আককাজ, রোকেয়া বেগম, জোবাইদা হক, মোছা. মেহেরুন্নেছা, নির্মলা রাণী রায়, রিজিয়া কামাল ও সুফিয়া খাতুন।

বিশেষ বিভাগে সম্মাননা পেয়েছেন গুলনাহার বেগম, তাহেরা খানম, ছালেহা খাতুন, রহিমা খাতুন, আনোয়ারা বেগম, দিলরুবা হক রুমা, তাহমিনা বেগম, রোকেয়া সিদ্দিকী, পারভীন হাকিম আনোয়ার ও খন্দকার তহুরা।