বাবা-মায়ের নামে গালি দেওয়ায় মালিককে খুন

ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত (সিজিএম)। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত (সিজিএম)। ছবি: প্রথম আলো

ছেলেটির নাম অমিত। বয়স ১৮ বছর। কাজ করতেন কেরানীগঞ্জের একটি গার্মেন্টস কারখানায়। সারা দিন কাজ শেষে ওই কারখানায় ঘুমাতেন। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে কারখানার মালিক হাশেম ঢালী (৬৫) তাঁকে মাঝেমধ্যে বকাঝকা করতেন। এতে হাশেমের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হন অমিত। এর জের ধরেই বৃদ্ধ হাশেমকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করেন অমিত।

হাশেমকে খুনের দায় স্বীকার করে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজিএম) আদালতে ৩ মে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন অমিত। কীভাবে এবং কেন হাশেমকে তিনি খুন করেছেন, তা সবিস্তার আদালতকে জানিয়েছেন অমিত। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ায়।

২ মে কেরানীগঞ্জের ঢালী গার্মেন্টস কারখানা থেকে হাশেম ঢালীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় হাশেমের ছেলে রিয়াজ ঢালী বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সে দিনই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে খুনের মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, কেরানীগঞ্জের আগানগরে তাঁর বাবার একটি গার্মেন্টস কারখানা আছে। নাম ঢালী গার্মেন্টস। কারখানায় থেকে তাঁর বাবা জিনসের প্যান্ট তৈরির কাজ করতেন।

হাশেমের ছেলে রিয়াজ ঢালী আজ রোববার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অমিত তাঁর বাবার কারখানায় কাজ করতেন। সেই (অমিত) তাঁর বাবাকে হত্যা করেছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ ঢাকার আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, কাজ শেষে হাশেম ঢালী ও অমিত কারখানায় ঘুমিয়ে থাকতেন। ১ মে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে অমিতকে হাশেম ঢালী গালিগালাজ করেন, জুতা দিয়ে মারার জন্য তেড়ে যান। আবার দিনের বেলাও সেদিন অমিতকে গালিগালাজ করেন হাশেম। কাজ শেষে হাশেম ঘুমিয়ে পড়েন। তখন অমিত কারখানায় থাকা কাপড়ের টুকরা দিয়ে হাশেমের হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে গলা টিপে হাশেমকে হত্যা করেন অমিত। হাশেমের হাত-পায়ের বাঁধন খুলে ফেলেন এবং সেগুলো পাশের বাসার মাহবুব হাসানের টিনের ওপর ফেলে দেন।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অমিত বলেন, হাশেমের কারখানায় তিনি কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। হাশেম ঢালী সেদিন তাঁর বাবা-মা তুলে গালি দেন। তখন হাশেমকে তিনি বাবা-মা তুলে গালি না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু হাশেম তখন তাঁকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। হাশেম খারাপ ব্যবহার করতেন। হাশেম পরে তাঁকে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু কাজ করা শুরু না করলে আবার বিশ্রী ভাষায় তাঁকে গালিগালাজ করেন। এতে হাশেমের ওপর তাঁর খুব রাগ হয়। ওই রাতেই তিনি হাশেমের গলা টিপে ধরেন। তখন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে হাশেম মারা যান।

তদন্ত কর্মকর্তা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাক্রাতুল ইসলাম রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, অমিত খুন করার পর এমন ভাব নিয়েছিলেন যেন তিনি হাশেম খুনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। সকালে লাশ উদ্ধার হওয়ার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন অমিত তাঁদের জানিয়েছিলেন, তিনি কিছুই জানেন না। তবে অমিতের ওপর তাঁদের সন্দেহ হয়। থানায় নিয়ে আসার পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে হাশেমকে খুন করার কথা স্বীকার করেন অমিত।