বান্দরবানে খুন ও অপহরণের ঘটনায় আতঙ্ক

গতকাল রোববার সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক কাটাতে রাজবিলা ইউনিয়ন পরিষদে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের উদ্যোগে এক সভার আয়োজন করা হয়। সভায় পুলিশ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন। উপস্থিত লোকজন বলেন, এসব ঘটনার পর থেকে তঞ্চঙ্গ্যা পুরুষ বিশেষ করে যুবকেরা ওই এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এলাকার লোকজন প্রশাসনকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ওই সভায় বান্দরবানের পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান ক্য অং প্রু মারমা, হেডম্যান রুইতুয়াং মারমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাজবিলা ইউপি চেয়ারম্যান ক্য অং প্রু মারমা প্রথম আলোকে বলেন, রাজবিলা ও কুহালং ইউনিয়নের বাসিন্দারা এ ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে। আতঙ্ক কাটানো ও সন্ত্রাসীদের বিতাড়নের জন্য তাইংখালীতে একটি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। না হলে আবার হত্যা ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

মিয়ানমার সীমান্তে সক্রিয় আরাকান লিবারেশন পার্টির একটি দলছুট অংশ বান্দরবানের রাজবিলা ও কুহালং এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। ওই সন্ত্রাসী গ্রুপটি নিজেদের ‘মগ পার্টি’ নামে পরিচয় দেয়। সম্প্রতি রাঙামাটির রাজস্থলীতে একটি ঘটনার জের ধরে জেএসএসের সঙ্গে মগ পার্টির বিরোধের সূত্রপাত হয়। ওই ঘটনার পাল্টা–পাল্টি হিসেবে খুন এবং অপহরণের ঘটনা ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

রাজবিলা ইউনিয়ন পরিষদের কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভায় আতঙ্কের কথা তুলে ধরেছেন অনেকে। তাইংখালীর একজন নারী নিরাপত্তা দাবি করে বলেছেন, এলাকায় কাকে, কে, কখন হত্যা করে কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ রকম অবস্থায় বেঁচে থাকায় যায় না। বিষু মোহন তঞ্চঙ্গ্যা নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, চাঁদাবাজির বিরোধ থেকে এসব হত্যা–পাল্টা হত্যার ঘটনার ঘটছে।

 বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকা কয়েকজন তঞ্চঙ্গ্যা যুবক বলেছেন, মগ পার্টির সদস্যরা মনে করেন, চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যারা জেএসএসকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। এ জন্য বিনয় তঞ্চঙ্গ্যা, জয়মনি তঞ্চঙ্গ্যাকে তাঁরা হত্যা করেছেন। ফোলাধন তঞ্চঙ্গ্যাকেও অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাজবিলার তাইংখালীতে বিনয় তঞ্চঙ্গ্যাকে ও গত বৃহস্পতিবার কুহালংয়ের বাকিছড়া ৩ নম্বর রাবার বাগানপাড়ায় জয়মনি তঞ্চঙ্গ্যাকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। একই দিন ফোলাধন তঞ্চঙ্গ্যাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাঁর এখনো হদিস পাওয়া যায়নি।

বান্দরবার সদর থানার ওসি শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।