গবাদিপশুর খাদ্যের চাহিদা মেটাচ্ছে নেপিয়ার ঘাস

যশোরের বাঘারপাড়ায় ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে নেপিয়ার ঘাস। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার গাইদঘাট গ্রামে।  প্রথম আলো
যশোরের বাঘারপাড়ায় ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে নেপিয়ার ঘাস। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার গাইদঘাট গ্রামে। প্রথম আলো

গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে উন্নত জাতের ঘাস নেপিয়ার চাষে ঝুঁকছেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার কৃষক ও খামারিরা। বিচালি ও খড়ের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর বিকল্প খাদ্য হিসেবে উপজেলার কৃষক ও খামারিরা নেপিয়ার ঘাস চাষে উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন।

উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এই উপজেলায় প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ হচ্ছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন প্রায় ৭০০ কৃষক ও খামারি। নেপিয়ার ঘাস গরুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। নেপিয়ার জাতের ঘাস গরুর খাবারের ছয়টি উপাদানের সুষম চাহিদা পূরণ করে। অন্যান্য দানাদার খাবার গরুকে বেশি খাওয়ালে তাতে সব খাদ্যগুণ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া খাদ্য হিসেবে শুধু ঘাস দিলে গরুর পরিপাকব্যবস্থা ভালো থাকে। এ জাতের ঘাস রোপণের এক থেকে দুই মাসের মাথায় কাটার উপযোগী হয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে একই গোছা (গোড়া) থেকে চারা গজায়। সে ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে কাটার উপযোগী হয়। একটি গোছা থেকে ১২ থেকে ১৫ কেজি ঘাস হয়। একটি গরুর জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ১০ কেজি ঘাস প্রয়োজন হয়। একবার বীজ বুনলে বা চারা রোপণ করলে কয়েক বছর অনবরত ঘাস পাওয়া যায়। ফলে খরচ কম হয়।

সরেজমিনে উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের গাইদঘাট গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কৃষক তাঁদের জমিতে ধানের পাশাপাশি ঘাস চাষ করেছেন। তাঁদের একজন সাজ্জাদ হোসেন খান। তিনি আট শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। তাঁর নিজের চারটি গরু রয়েছে। তাঁর গরুর খাদ্যের চাহিদা মিটছে নিজের খেতের উৎপাদিত ঘাসে। তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছি। এতে লাভ বেশি। খরচ খুবই কম। গাভির দুধও বেশি হয়। এই ঘাস চাষের জন্য বীজ বোনা এবং চারা লাগানো যায়। বীজ বুনলে দেড় মাস এবং চারা লাগালে এক মাসের মধ্যে ঘাস বড় হয়ে যায়। প্রতিমাসে অল্প ফসফেট, পটাশ এবং ইউরিয়া সার দিতে হয়। মাঝেমধ্যে সেচও দিতে হয়।’

একই গ্রামের কৃষক শহিদ আলম খান বলেন, ‘সাত শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছি। এই জমির ঘাস থেকে আমার তিনটি গরুর খাদ্যের চাহিদা মিটে যায়। গরু কাঁচা ঘাস পায়। এই ঘাসে পুষ্টি বেশি।’

উপজেলার দোহাকুলা গ্রামের জহুরুল ইসলাম গরু পালন করেন। তাঁর গোয়ালে সব সময় ৪ থেকে ১০টি গরু থাকে। তিনি গরু মোটাতাজাকরণ করেন। তিনি পাঁচ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছেন। এ বছর আরও ১৩ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করবেন। জহুরুল বলেন, ‘আগে বিচালি এবং খড়ের অভাবে গরু পালন করতে পারতাম না। দামও অনেক বেশি ছিল। এখন নেপিয়ার ঘাস চাষ করে আমার গো-খাদ্যের সংকট দূর হয়েছে।’

নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তারামপুর গ্রামের কৃষক নওয়াব আলী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার পাঁচটি গরু। এর মধ্যে দুটি গাভি। আমি সাড়ে আট শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছি। গরু কাঁচা ঘাস খাচ্ছে। গরুর শরীরও ভালো থাকছে। দুটি গাভি থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত কেজি দুধ পাচ্ছি।’

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেপিয়ার ঘাস একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। একবার লাগালে কয়েক বছর ধরে ঘাস পাওয়া যায়। অন্য ফসলের মতো নেপিয়ার ঘাসের যত্ন নেওয়া লাগে না। সময়মতো সেচ আর সামান্য সার দিলেই ভালো ফলন হয়। শুকনা বিচালির তুলনায় সবুজ ঘাসে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে। এই ঘাস পশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও মাংস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুস্থ–সবল পশু পালনে সবুজ ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। বাঘারপাড়ার অনেক কৃষক এবং খামারি এখন নেপিয়ার ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এই ঘাসের উপকারিতা জেনে তাঁদের দেখে অন্যরাও চাষ করছেন। গরুর খাবারের চাহিদা পূরণে এই ঘাস উপকারী।’