উত্তরায় ঐতিহ্য আর পাশ্চাত্যের মিশেলে বাহারি ইফতার

উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে রয়াল ক্যুইজিনে হরেক পদের ইফতার। গতকাল বিকেলে।  প্রথম আলো
উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে রয়াল ক্যুইজিনে হরেক পদের ইফতার। গতকাল বিকেলে। প্রথম আলো

টেবিলে সাজিয়ে হরেক রকম ঐতিহ্যবাহী দেশি ভাজাপোড়া খাবারগুলো সুগন্ধি ছড়াচ্ছে চারদিকে। তার পাশেই সাজানো হরেক রকমের চায়নিজ, থাই, তুর্কিসহ পশ্চিমা একাধিক দেশের সুস্বাদু সব খাবারের সম্ভার।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার আর পাশ্চাত্যের বিভিন্ন জনপ্রিয় খাবারের মিশেলে ইফতারির বাহারি আয়োজন রয়েছে রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁতে। প্রতিদিন বিকেল থেকেই ক্রেতারাও নিজেদের পছন্দমাফিক দেশি ও পাশ্চাত্য ঘরানার ইফতারি কিনছেন।

গতকাল রোববার উত্তরার উল্লেখযোগ্য কিছু হোটেল-রেস্তোরাঁয় খোঁজ নিয়ে দেশি–বিদেশি খাদ্য সম্ভারে সাজানো ইফতারির আয়োজন দেখা গেছে। এর মধ্যে কাবাব ফ্যাক্টরি, লা বামবা, রয়াল ক্যুইজিন, সী-শেল, গোল্ডেন স্পুন, ব্রোকলি, খাজানা, বুকারু, ও ক্যাপ্টেন, বারিস্তাতে দেশি–বিদেশি হরেক রকম সুস্বাদু খাবারের আয়োজন দেখা গেছে।

ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ঘুগনি, ছোলা, পেঁয়াজি, বেগুনি, চপ, হালিম, জিলাপি, দইবড়া, নানা ধরনের কাবাব ও তেহারি। রেস্তোরাঁভেদে এগুলোর দাম ১৫-২৫০ টাকা পর্যন্ত। আর পাশ্চাত্য ধাঁচের উপকরণের মধ্যে আছে চিকেন ইকাদো, মম, চিকেন সুমাই, ফিশ ফিলেট, ফিশ ফিঙ্গার, স্প্রিং রোল, সুইটিস প্রভৃতি। ধরনভেদে এগুলোর দাম ২৫-৪৫০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

উত্তরা রবীন্দ্রসরণির লা বামবা রেস্তোরাঁতে গিয়ে দেখা গেল, বাংলা ও চায়নিজ খাবার নিয়ে সাজানো বাহারি সব ইফতারি। রেস্তোরাঁ কর্মকর্তা রুবায়েত হোসেন জানান, তাঁদের বিশেষ উপকরণের মধ্যে বোম্বে ও রেশমি জিলাপি কেজিপ্রতি ৪৫০ ও ৫৫০ টাকা, দইবড়া ৫০ টাকা, মাটন হালিম ৪৫০ (ছোট) এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ির খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে রান্না করা বিফ তেহারি ১৬০ টাকা। আর চায়নিজ পদের মধ্যে চিকেন সুমাই ৫০ টাকা ও চিকেন ইকাতো ৫০ টাকা রয়েছে।

নিজেদের নিয়মিত চায়নিজ পদের পাশাপাশি ইফতারে উত্তরাবাসীকে ঐতিহ্যের স্বাদ দিতে প্রতিবছরই পবিত্র রমজানের সময় পুরান ঢাকা থেকে অভিজ্ঞ বাবুর্চি ভাড়ায় আনে রয়াল ক্যুইজিন রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ। রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক দীন ইসলাম জানান, এই বছরও আটজন বাবুর্চি পুরো রমজান মাসে তাঁদের সঙ্গে কাজ করছেন।

এতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রীর মধ্যে রেশমি জিলাপি কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা, হালিম ৩৫০ থেকে ৬২০ টাকা, বটি কাবাব ১৭০ টাকা (বিফ ও মাটন) চিকেন চাপ, টিক্কা ১৭০ ও ১৬০ টাকা ছাড়াও পেঁয়াজি, বেগুনি ও আলুর চপ ১০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

রয়াল ক্যুইজিনের পরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, ‘উত্তরাতে ইফতার পরিবেশনের ক্ষেত্রে শুধু স্বাদের বিষয়টিই নয়, স্বাস্থ্যগত বিষয়টিও আমরা খুব গুরুত্ব ও দৃঢ়তার সঙ্গে খেয়াল রাখছি। ক্রেতারা চাইলেই যেকোনো সময় আমাদের রান্নাঘর দেখতে পারবে। আমাদের লক্ষ্য ইফতারিটা ক্রেতারা যেন ঘরের তৈরি খাবারের মতোই উপভোগ করতে পারেন।’

ইফতারে কাবাব ফ্যাক্টরির বিশেষ আয়োজন আস্ত খাসির রোস্ট। যাতে প্রায় ৭ কেজি ওজনের খাসি ব্যবহার করা হয়। এর দাম ১০ হাজার টাকা। ইফতারে এটি পেতে হলে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অন্তত পাঁচ ঘণ্টা আগে আগাম ফরমায়েশ দিতে হবে। দিনে ২ থেকে ৩টি আস্ত খাসির রোস্টের ফরমায়েশ আসছে বলে প্রতিবেদককে জানান রেস্তোরাঁটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মিনহাজ মুস্তাকিম। ইফতারে নিয়মিত আয়োজনের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারে বিশেষত্ব আনতে পুরান ঢাকার ও পাঠান বাবুর্চি পাকিস্তান থেকে নিয়ে এসেছেন রেস্তোরাঁর মালিক পক্ষ। রমজান মাসজুড়ে তাঁরা ইফতারির বিশেষ সব মুখরোচক খাবার তৈরি করবেন বলেও জানান রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক মিনহাজ।

লা বামবা থেকে ইফতার কিনতে আসা উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের আফরিন জামান বলেন, এখান থেকেই নিয়মিত ইফতারি কিনি। দইবড়াটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে বলেও তিনি জানান।