শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দলীয় পদ হারাতে পারেন অনেক মন্ত্রী-সাংসদ

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম চার ধাপে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ ওঠে ৫৫ জন দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। এক মাস পেরিয়ে গেলেও নোটিশ পাঠানো হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশল নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ধাপে ধাপে নীরবে শাস্তি দেওয়া হবে দায়ী নেতাদের।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকেরা অভিযুক্তদের আলাদা আলাদা তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দেন।এতে অভিযুক্ত সাংসদদের মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নামও উঠে আসে।ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন তাই আরও ভালো করে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সময় নেওয়া হচ্ছে। সবার বিরুদ্ধে একসঙ্গে ব্যবস্থা নিতে চায় না দলটি। তবে আগামী সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দলের সম্মেলনে দলীয় পদ হারাতে পারেন তাঁরা। ভবিষ্যতে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রেও এসব অভিযোগ বিবেচনা করা হবে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির দুই কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময়ে নীরবে শাস্তি পেয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে এক-এগারো পরবর্তী সময়ে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা দলের পদ হারিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি কেউ কেউ। পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়েই এদের অনেকে দল ছেড়ে চলে গেছেন কিন্তু দল তাদের কাউকে বহিষ্কার করেনি।এখনো দলে নানাভাবে কোণঠাসা হয়ে আছেন কেউ কেউ। তাই সরাসরি ব্যবস্থা না নিলেও উপজেলা নির্বাচনে বিরোধিতাকারীরা পর্যায়ক্রমে শাস্তির মুখে পড়বেন বলে জানিয়েছেন নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের পর পর অনেকের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ উঠেছে। তাই দলের পক্ষ থেকে আরও ভালো করে অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে অভিযুক্তদের তালিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকেই অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকের পর দিন থেকে নোটিশ পাঠানোর কথা থাকলেও পরে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগ। দলের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে এখন সাংগঠনিক সফরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নেতারা। আগামী অক্টোবরের মধ্যে এ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ যদ্দিন সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, নৌকার বিরোধিতায় জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। দলীয় প্রধানের কাছে সব তথ্য আছে। সময় মতো তিনি ব্যবস্থা নেবেন। কেন্দ্রসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠনের সময় দলীয় পদ হারাতে পারেন এসব নেতারা। অতীতেও এমন নীরব ব্যবস্থা নেওয়ার নজির আছে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪৪৫ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হওয়া উপজেলা নির্বাচনে অন্তত ৪৫ জন সাংসদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে করার অভিযোগ পাওয়া যায়।এঁদের মধ্যে দুজন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রী আছেন।দলীয় সাংসদ ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সমর্থন নিয়ে ১৩৬ উপজেলায় জয়ী হয়েছেন নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীরা।বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় সাংসদের আত্মীয়।আবার কেউ কেউ একান্ত অনুসারী হিসেবে পরিচিত।সাংসদেরা সরাসরি ঘোষণা না দিলেও তাঁদের সমর্থিত প্রার্থীকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। সাংসদদের অনুসারীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারে অংশ নেন।আবার কোনো কোনো সাংসদ আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে মাঠেও নেমেছেন।নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ১৪ জন সাংসদকে এলাকা ছাড়তে বলেছিল নির্বাচন কমিশন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত সাংসদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি দল।তাঁরা মনে করছেন, দলের পক্ষ থেকে অন্তত সতর্ক করা উচিত ছিল। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অনেকেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে আগ্রহী হতে পারেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার এ প্রবণতা বেশি থাকে। ঈদের পর পঞ্চম ধাপের উপজেলা নির্বাচন এবং এ বছরই হতে যাওয়া সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। ব্যবস্থা নেওয়া হলে বাকিরা সতর্ক হয়ে যাবেন।