কাউন্সিলরের কবজায় পুকুর

গাজীপুরের টঙ্গীর পশ্চিম আরিচপুর এলাকায় সরকারি পুকুরে অবৈধ স্থাপনা। গতকাল তোলা ছবি।  প্রথম আলো
গাজীপুরের টঙ্গীর পশ্চিম আরিচপুর এলাকায় সরকারি পুকুরে অবৈধ স্থাপনা। গতকাল তোলা ছবি। প্রথম আলো

এলাকার একমাত্র সরকারি পুকুরের বেশির ভাগই দখলে নিয়ে কার্যালয়, দোকান ও গুদাম করা হয়েছে। বাকি অংশেও ভরাট চলছে। দখলের কাজটি করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হোসেন। কাউন্সিলরের কার্যালয়টিও পুকুর ভরাট করেই নির্মিত।

গাজীপুরের সাবেক টঙ্গী পৌরসভার পশ্চিম আরিচপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডের উত্তরে হিমারদীঘি, দক্ষিণে আরিচপুর, পূর্বে আরিচপুর, পশ্চিমে মাছিমপুর ও টঙ্গী। এখানকার ভোটার প্রায় ২৪ হাজার। লোকসংখ্যা দুই লক্ষাধিক।

স্থানীয় লোকজন জানান, ওয়ার্ডের মূল সমস্যা মাদক। সন্ধ্যা হলেই অলিগলিতে মাদক বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কাঁচাবাজার, চিকিৎসাকেন্দ্র, খেলার মাঠ, পার্ক, এমনকি কবরস্থানও নেই।

পশ্চিম আরিচপুরের মনসুর আলী রোডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, ওয়ার্ডে ঘরবাড়ি ছাড়া কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। আছে শুধু একটি পুকুর। সেই পুকুর দখল করেছেন কাউন্সিলর নিজেই। একসময় পুকুরটি অনেক বড় ছিল। সেটির বেশির ভাগ অংশ ভরাট করে কার্যালয়, গুদাম ও দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পুকুরটি সংকুচিত হয়ে গেছে।

গতকাল রোববার ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ার্ডের ভেতরে বড় কোনো রাস্তা নেই। বেশির ভাগ রাস্তা সরু। হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কোনো অবস্থাতেই এলাকায় ঢুকতে পারবে না। কোনো রাস্তার পাশে ড্রেন (নালা) নেই। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়। পুরো ওয়ার্ডে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা (বিল্ডিং কোড) না মেনে বহুতল ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। খেলার মাঠ না থাকায় টঙ্গী নদীবন্দর এলাকার খোলা জায়গায় ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে।

ওয়ার্ডের সড়কগুলোতে পর্যাপ্ত সড়কবাতি নেই। সন্ধ্যার পর রাস্তা অন্ধকার হয়ে যায়। এই সুযোগে মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। সন্ধ্যার পর এলাকায় চুরি-ছিনতাই বেড়ে যায়। এ ছাড়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকলেও তেমন কোনো সমস্যা নেই। কারণ, ওয়ার্ডের পাশেই টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল। এলাকার ভাঙা রাস্তাগুলো বহুদিন ধরে মেরামত করা হচ্ছে না। ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। যত্রতত্র ময়লা ফেলা হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, এয়ার্ডের পুকুরটি কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে পুকুরটি তাঁরই দখলে। পুকুরটির চারপাশ দিয়ে মাটি ভরাট করে কাউন্সিলরের কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি গুদাম ও দোকানঘর নির্মাণ করে সেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এতে পুকুরটি অনেক ছোট হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন চাইলেও কোনো কাজে পুকুরটি ব্যবহার করতে পারেন না। স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, দখলদারদের উচ্ছেদ করা হোক। পুকুরটিকে খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক।

স্থানীয় লোকজন জানান, সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের জন্য তেমন কোনো নাগরিক সুবিধা নেই। টঙ্গী পৌরসভা থাকাকালীন যা ছিল, এখনো তাই আছে। দু-একটি রাস্তার সংস্কারকাজ হলেও সেগুলো ভেঙে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ড্রেনেজ (পানিনিষ্কাশন) ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

আরিচপুর বউবাজার এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ট্যাক্স (কর) বেড়েছে, নাগরিক সুবিধা বাড়েনি। মানুষের কাঙ্ক্ষিত সিটি করপোরেশন কবে হবে তার কোনো লক্ষণ নেই।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ার্ডে অনেক সমস্যা আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা মাদক। শিগগিরই পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। ওয়ার্ডে কাঁচাবাজার, চিকিৎসাকেন্দ্র, খেলার মাঠ, পার্ক থাকার কথা থাকলেও জায়গার অভাবে তা করা সম্ভব নয়। আর আশপাশের কয়েকটি ওয়ার্ডের জন্য মরকুন এলাকায় একটি কবরস্থান রয়েছে। পুকুর দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি সরকারি পুকুর নয়, এটি সিটি করপোরেশনের পুকুর। আমি লিজ নিয়েছি। সিটি করপোরেশনের প্রয়োজন হলে আমি ছেড়ে দেব।’ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি লিজ নিয়েছি, তাই এসব স্থাপনা আমিই করেছি।’