প্রেসক্লাবের সামনে ধান ছিটিয়ে প্রতিবাদ

ধানসহ সব কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের দাবিতে অভিনব প্রতিবাদ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, ঢাকা, ১৩ মে। ছবি: আশরাফুল আলম
ধানসহ সব কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের দাবিতে অভিনব প্রতিবাদ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, ঢাকা, ১৩ মে। ছবি: আশরাফুল আলম

রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে ধান ছিটানো। সেই ধান ছুঁয়ে দুজন শিক্ষার্থীর কৃষকদের মতো আহাজারি ও কান্না। পেছনের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে একের পর এক বক্তব্যে উঠে আসছে, ‘দেশের কৃষককে বাঁচাতে হবে।’ প্রতীকী অর্থে এই অভিনব প্রতিবাদের দেখা মিলল আজ সোমবার বিকেল তিনটার দিকে এক মানববন্ধনে।

সারা দেশে ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ও দ্রব্যমূল্যের ন্যায্য দামের দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিষদের ব্যানারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ সভাপতি ও পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, এই দেশের অর্থনীতি যে কৃষির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সেই দেশের কৃষকেরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। গণমাধ্যমে প্রতিদিন খবর আসছে। কৃষকদের পাশে ছাত্র সমাজ আছে উল্লেখ করে নুরুল হক নুর বলেন, কৃষকেরা এই দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাঁদের ধানের ন্যায্যমূল্যের দাম যদি না দেওয়া হয়, তাহলে তারা কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। সেটি এই রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর হবে। কৃষকদের ধানের ন্যায্য দাম দেওয়ার জন্য একটি তদারকি সেল গঠন করার দাবি জানান তিনি।

মানুষের মনে চাপা ক্ষোভ জমা হচ্ছে মন্তব্য করে নুরুল হক নুর বলেন, উন্নয়নের ফাঁকা বুলি আওড়ানো হচ্ছে। রাস্তা-ঘাট দুই-চারটি ফ্লাইওভার করলেই উন্নয়ন হবে না, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। জিডিপি বাড়ছে, মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে—এই সমস্ত ফাঁকা বুলি দিলে হবে না। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। মানুষের চাপা ক্ষোভ বিস্ফোরণ হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিন।

গতকাল রোববার টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কৃষক আবদুল মালেক সিকদার ধানের দাম না পেয়ে তাঁর ধানিজমিতে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। গণমাধ্যমে এই খবর ও ছবি প্রকাশের পর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রসঙ্গটি তুলে ধরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, টাঙ্গাইলে কৃষকেরা ধান পুড়িয়ে দিচ্ছে। আজকে এই ক্ষোভ কেন? প্রতি মণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হচ্ছে ৭৫০ টাকা, সেই ধান বিক্রি করতে গিয়ে মণ প্রতি তাদের লোকসান হচ্ছে ২০০ টাকা। কৃষকেরা প্রতিবছর ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় কী করছে?
সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকেরা ধানের দাম পাচ্ছে উল্লেখ করে পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, যেখানে এক কেজি চালের দাম ৪০ টাকা সেখানে এক কেজি ধানের দাম ১২ থেকে ১৪ টাকা। কৃষককে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে।

কৃষকের ধানের ন্যায্য দামের দাবিতে মানববন্ধন থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আগামী ১৫ মে বুধবার সারা দেশের জেলাগুলোতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানববন্ধন করা হবে।