আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত দিচ্ছেন না মৎস্য কর্মকর্তা

বান্দরবান সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশ মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৬ এপ্রিল দুদকের গণশুনানিতে মৃত ঠিকাদারের কাজের আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত দিতে দুদক কমিশনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৬ দিনেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত কোনো টাকা দেননি বলে মৃত ঠিকাদারের স্ত্রী লিপিপ্রু মারমা জানিয়েছেন।

দুদকের নির্দেশেও টাকা ফেরত না দেওয়ায় লিপিপ্রু ৭ মে বান্দরবান প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। সেখানে তিনি টাকা ফেরত না পাওয়ায় তাঁর অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। টাকা ফেরত না দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার আরেকটি লিখিত অভিযোগ দুদকের কাছে পাঠিয়েছেন।

বান্দরবান সদর উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ১৬ এপ্রিল বান্দরবান সদর উপজেলা মিলনায়তনে দুদকের গণশুনানি আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে মৎস্য বিভাগের ঠিকাদারের স্ত্রী লিপিপ্রু মারমা তাঁর মৃত স্বামীর কাজের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। লিপিপ্রু অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী উচনু মারমা ২০১৭ সালে মৎস্য বিভাগে প্রায় আট লাখ টাকার দুইটি বাঁধ নির্মাণের কাজ পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগে তিনি মারা যান। মৎস্য কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিন কাজের বিল দেওয়ার আশ্বাসে স্বামীর ঠিকাদারি কাগজপত্র জমা নিয়েছেন। সরল বিশ্বাসে তিনি কাগজপত্রের কোনো ফটোকপি রাখেননি। জিয়া উদ্দিন তাঁর স্বামীর কাগজপত্র গায়েব করেন। আরেকজন ঠিকাদারের নামে কার্যাদেশ দেখিয়ে কাজের টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, গণশুনানিতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিনের কাছে লিপিপ্রুর অভিযোগের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এ জন্য উপস্থিত দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম আত্মসাৎ করা সমস্ত টাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ১৭ এপ্রিল ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। না দিলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু জিয়া উদ্দিন জেলা প্রশাসকের কাছে টাকা জমা দেননি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম বলেন, জিয়া উদ্দিন কাউকে তোয়াক্কা করছেন না। টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। বিষয়টি তিনি দুদককে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, জিয়া উদ্দিন গণশুনানির পরদিন দুই লাখ টাকা নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ওই টাকা গ্রহণ না করে দুদকের নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত টাকা নিয়ে আসার জন্য তাঁকে বলা হয়েছে। এরপর থেকে নানা রকম টালবাহানা করছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিন দাবি করেন, তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। দুদকের গণশুনানিতে তাঁকে জোর করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ স্বীকার করানো হয়েছে। তিনি চেকের মাধ্যমে ঠিকাদারকে কাজের সমস্ত বিল দিয়েছেন। এ জন্য অন্য কাউকে কোনো টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই।

দুদকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, জিয়া উদ্দিনের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে।