মামলাই হচ্ছে কম, টাকা আদায় কঠিন

মোজাম্মেল হোসেন, তারেক মাসুদ, মিশুক মুনির, রাজীব হোসেন
মোজাম্মেল হোসেন, তারেক মাসুদ, মিশুক মুনির, রাজীব হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী ও বিতার্কিক নাফিয়া গাজী ১৯৯১ সালের ২৯ মার্চ রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের সামনে বিআরটিসির বাসচাপায় নিহত হন। এ ঘটনায় তাঁর বাবা কামাল আহাম্মেদ গাজী মামলা করলে ঢাকার আদালত ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দেন। ঘটনার প্রায় ২৬ বছর পর ২০১৭ সালে ক্ষতিপূরণের অর্থ পায় নাফিয়ার পরিবার।

দুই দশকের বেশি সময় আগে রাজধানীর শান্তিনগরে রাস্তা পার হওয়ার সময় কোমল পানীয়বোঝাই একটি মিনিট্রাক সংবাদ–এর সাবেক বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেনকে (মন্টু) চাপা দেয়, পরে তিনি মারা যান। এ দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলায় ঘটনার ২৬ বছর পর ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত থেকে রায় আসে। এরপর আরও তিন বছর কেটে গেলেও ক্ষতিপূরণের ১ কোটি ৭১ লাখ ৪৭ হাজার ৮ টাকা এখনো পায়নি বাদীপক্ষ (নিহত ব্যক্তির স্ত্রী)।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হলেও ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা কমই হয়। দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় আবার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা পরিবারের অনেকেই জানেন না যে মোটরযান অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মোটরযান ট্রাইব্যুনালে (দায়রা জজ আদালত) মামলা করা যায়। মামলা হলেও দীর্ঘসূত্রতা, আবার আদেশ ও রায় এলেও আইনি জটিলতায় আটকে যায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়া।

অবশ্য সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করে কতগুলো মামলা হয়েছে, সে তথ্য সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়নি। তবে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবার ও জনস্বার্থে ক্ষতিপূরণ দাবি করে রিটসহ পৃথক ১২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে, যার চারটি করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আটটি মামলা হয়েছে। তিনটির মধ্যে একটিতে ক্ষতিপূরণ এবং অপর দুটিতে আংশিক অর্থ পেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। বাকি নয়টির মধ্যে একটি আপিল বিভাগে এবং অপর আটটি হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

অপেক্ষা শেষ হয়নি মোজাম্মেলের স্ত্রীর
সড়ক দুর্ঘটনার পর ১৯৮৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর হাসপাতালে মারা যান মোজাম্মেল হোসেন (মন্টু)। তাঁর স্ত্রী রওশন আখতার ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে নিম্ন আদালতে মামলা করেন। এর পাঁচ বছর পর বিচারিক আদালতে এবং আরও পাঁচ বছর পর উচ্চ আদালতের রায় হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে ওই মিনিট্রাকের মালিক বাংলাদেশ বেভারেজ। ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় দেন। রায় অনুযায়ী বাদীপক্ষ ১ কোটি ৭১ লাখ ৪৭ হাজার ৮ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী।

সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর না হলে বিচারপ্রার্থী কোথায় যাবেন এমন প্রশ্ন রেখে মামলার বাদী ও নিহত মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী রওশন আখতার প্রথম আলোকে বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায় পেতে ২৬ বছর কেটে গেছে। আপিল বিভাগের রায়ের পর ওই অর্থ আদায়ে বিচারিক আদালতে মামলা করা হয়। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করা যায়নি। এখনো মামলা চলছে। টাকা না দেওয়ায় ঢাকার তেজগাঁওয়ে ওই কোম্পানির পাঁচ বিঘা সম্পত্তি ক্রোক করে নিলামের আদেশ হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। তবে কেউ অংশ নেয়নি। ক্ষতিপূরণের অর্থ কবে পাবেন, এমন প্রশ্ন রেখে ওই অর্থ পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন রওশন আখতার।

অবশ্য বিচারিক আদালতের রায়ে ক্ষতিপূরণের ১০ লাখ টাকা পেতে ২৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী নাফিয়া গাজীর পরিবারকে। যদিও ওই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিল, যা ২০১৫ সালে বিফল হয়। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিসি ২০১৭ সালে সাতটি কিস্তিতে নাফিয়া গাজীর পরিবারকে ওই অর্থ পরিশোধ করে বলে বিআরটিসির একজন কর্মকর্তা জানান।

তারেক মাসুদ নিয়ে আপিলে, মিশুক মুনির হাইকোর্ট
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মুনির। এরপর নিহত দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে মোটরযান অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মামলা করা হয়। তারেক মাসুদের পরিবারের করা মামলায় ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়।

তবে রায়ের পর বাস মালিকপক্ষ ও বাদীপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছে, যা আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায়। অন্যদিকে মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষ থেকে করা ক্ষতিপূরণ মামলা হাইকোর্টে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে আছে। এ মামলায় হাইকোর্টে ১৯ জুন সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে বলে জানান তাঁদের আইনজীবী রমজান আলী শিকদার।

সাংবাদিক মন্টু ও তারেক মাসুদের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলার প্রসঙ্গে সারা হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় গেল ২৬ বছরে দুটি মাইলফলক মামলা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকার জরুরি। আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করে আদালত থেকে রায় হয়েছে। দুটির একটি ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ মেলেনি। যে মামলাটি আপিল পর্যায়ে আছে, সেটি দ্রুত নিষ্পত্তি হলে ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কী ধরনের প্রতিকার পাবেন, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। আদালতের রায়ের পর অর্থ আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া সহজ করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় কয়েকটি রিট
এক. এ বছরের ১৯ মার্চ রাজধানীর বসুন্ধরায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নদ্দা এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসচাপায় নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ছাত্র আবরার। ওই ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০ মার্চ জরুরি খরচ হিসেবে আবরারের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। তবে এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় সুপ্রভাত পরিবহন, আটকে যায় অর্থ পরিশোধ। গত ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগ সুপ্রভাত পরিবহনের আবেদনটি খারিজ করে দেন, ফলে অর্থ পাওয়ার পথ খোলে।

দুই. গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয় গাড়িচালক রাসেল সরকারকে, যাতে তিনি পা হারান। ওই দুর্ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম রিট করেন। গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট এক আদেশে দুই সপ্তাহের মধ্যে রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন নিয়ে যায় ওই পরিবহন কর্তৃপক্ষ, যা ৩১ মার্চ খারিজ হয়। পরে ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইনকে বাধ্য করেন আদালত। বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে গ্রিন লাইনকে এক মাস সময় দেওয়া হয়।

সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, এরপর আর কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। ১৫ মে হাইকোর্টে শুনানির দিন রয়েছে।

তিন. জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় গত বছরের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম (রাজীব) ও দিয়া খানম (মিম) প্রাণ হারায়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুসের করা এক রিটের ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ৩০ জুলাই হাইকোর্ট এক আদেশে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে রাজীব ও মিমের পরিবারকে পাঁচ লাখ করে টাকা দিতে ওই পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে ওই পরিবহন কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে বিফল হয়। গত বছরের অক্টোবরে রাজীব ও মিমের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে ১০ লাখ টাকা ওই পরিবহন পরিশোধ করেছে বলে জানিয়েছেন রুহুল কুদ্দুস।

চার. গেল বছরের ৩ এপ্রিল দুই বাসের রেষারেষিতে এক হাত হারান তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন, পরে তিনি মারা যান। আইনজীবী রুহুল কুদ্দুসের এক রিটের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৮ মে হাইকোর্ট এক আদেশে রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন, যার মধ্যে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে এক মাসের মধ্যে ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। এর বিরুদ্ধে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহন আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২২ মে আপিল বিভাগ ওই অর্থ প্রদানের আদেশ স্থগিত করে ক্ষতিপূরণ দিতে দায় নিরূপণ কমিটি গঠন করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন। কমিটি গত অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিল করে। রাজীরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ কয়েকটি বিষয়ে দেওয়া রুলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি চলছে। আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টে ১৫ মে রুলের ওপর শুনানির জন্য দিন রয়েছে।

পাঁচ. গত ১৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামে কলেজশিক্ষার্থী সোমা বড়ুয়া, ২২ জানুয়ারি স্কুলশিক্ষার্থী কাজী মাহমুদুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। ২৮ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জে দুই শিশু সহোদর ফাতিমা আফরীন ও আফসার হোসেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এই চার মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি রিট করে চিলড্রেন’স চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (সিসিবি ফাউন্ডেশন) ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রশ্নে রুল দিয়ে ওই চারজনের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে জানান রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী আবদুল হালিম।

ছয়. চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তরায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজা তাহমিনা (১০), গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৩ ফেব্রুয়ারি মিরাজ খান (৫), ২ ফেব্রুয়ারি বরিশালে লিজা আক্তার (৯), সিলেটের বালাগঞ্জে আহমেদ রিফাত (৬) এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত চৌধুরী (২৩) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। তাদের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি রিট করে সিসিবি ফাউন্ডেশন ও ব্লাস্ট।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে নিহত পাঁচজনের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে জানান আইনজীবী আবদুল হালিম।

সাত-আট. এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবরে রাজধানীতে এক বছর বয়সী শিশু নাবিলা ও মৌলভীবাজারে সাত দিনের এক শিশু মৃত্যু হয়। এই দুটি ঘটনায় পৃথক রিট করে সিসিবি ফাউন্ডেশন ও ব্লাস্ট। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে প্রথম ঘটনার ক্ষেত্রে গত বছরের ১৯ নভেম্বর এবং দ্বিতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুল দেন। আবেদনকারীদের আইনজীবী আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, দুই ক্ষেত্রেই নিহত শিশুর পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। হাইকোর্টে রুল এখন চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায়।

কোনো পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম বা উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হন, সে ক্ষেত্রে ওই পরিবারের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে ক্ষতিপূরণ জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ঘটলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যেই ব্যাহত হতে পারে। উন্নত দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকেন। যেহেতু আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি, এ দিকটি বিবেচনায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’