স্ত্রীসহ নীলফামারীর সাবেক সাংসদ শওকতের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে

সাবেক সাংসদ শওকত চৌধুরী
সাবেক সাংসদ শওকত চৌধুরী

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে নীলফামারী-৪ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ শওকত চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী মাহবুবা খাতুনের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার কমিশন এ মামলার অনুমোদন দেয়।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শিগগিরই মামলা দুটি করবেন সংস্থার উপপরিচালক নাসির উদ্দিন।

দুদক সূত্র জানায়, দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে শওকত চৌধুরী ১১ কোটি ২২ লাখ ৩৫ হাজার ১৩৭ টাকার হিসাব দিয়েছেন। কিন্তু অনুসন্ধানের সময় তাঁর ১৩ কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৭ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। দুদক বলছে, সম্পদ বিবরণীতে তিনি ২ কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এ ছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তাঁর অর্জিত সম্পদের মধ্যে ৯ কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ৩৪১ টাকার কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে মাহবুবা খাতুনের দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ২০০ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেন। অনুসন্ধানের সময় দুদক ১৮ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকার তথ্য পায়, যা মাহবুবা খাতুন গোপন করেছেন। দুদকের তথ্যমতে, তাঁর মোট সম্পদের মধ্যে ১ কোটি ২১ লাখ ৩৯ হাজার ৭০০ টাকা অর্জনের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

শওকতের বিরুদ্ধে আরও মামলা
এর আগে ২০১৬ সালে শওকত চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। ওই বছরের ১০ মে রাজধানীর বংশাল থানায় করা মামলায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক থেকে ১২০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম। ৮ মে করা আরেক মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে সোয়া কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

দুটি মামলায় শওকত চৌধুরী ছাড়া আরও যাঁদের আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চলতি দায়িত্বে ছিলেন) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিকুল ইসলাম, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট পানু রঞ্জন দাস, সাবেক ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ইফতেখার হোসেন, বংশাল শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুল গনি, বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার কর্মকর্তা শিরিন নিজামী, সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার দেবাশীষ কুমার ও এক্সিকিউটিভ অফিসার আসজাদুর রহমান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যাল কোম্পানি ও যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাংকটির বংশাল শাখা থেকে ৯৩ কোটি কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ২৩১ টাকা আত্মসাৎ করে। পরে সুদে-আসলে সেটি দাঁড়ায় ১২০ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৯৯০ টাকা। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক শওকত চৌধুরী।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক থেকে জালিয়াতির জন্য নানা কৌশল নেয় প্রতিষ্ঠান দুটি। ভুয়া মেয়াদি আমানত (এফডিআর) দেখিয়ে তার বিপরীতে ঋণ নেওয়া, বিটিআরসির একটি হিসাবকে জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে নিজেদের দেখিয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনসহ নানা প্রক্রিয়ায় ওই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

৮ মে দুদকের করা মামলায় ওই দিন রাতেই পাঁচ ব্যাংকারকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তাঁরা হলেন, কমার্স ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট পানু রঞ্জন দাস, সাবেক ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ইফতেখার হোসেন, বংশাল শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুল গনি ও এক্সিকিউটিভ অফিসার আসজাদুর রহমান।