সংঘর্ষের কারণ নৌযানে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার

সুনামগঞ্জের ছাতকে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আহত হয়েছেন ৩০ জন। এ ঘটনায় পুলিশ ২৮ জনকে আটক করেছে।

ছাতক পৌর শহরের গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় এই ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাবুদ্দিন (৫০) নামের এক ব্যক্তি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত ১২ টার দিকে মারা যান।

পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুরমা নদীতে বালু ও পাথর পরিবহনকারী নৌযান থেকে চাঁদাবাজি এবং নদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শহরের দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এই দুই পক্ষের লোকজনই আবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছাতক পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম চৌধুরীর ছোট ভাই ছাতক চুনাপাথর আমদানি ও সরবরাহ সমিতির সভাপতি সেলিম আহমদ চৌধুরী। অন্য পক্ষে ছাতক পৌরসভার কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিন চৌধুরী। কাউন্সিলর ও অন্যদের ‘শাহজালাল সমিতি’ নামে একটি সংগঠন রয়েছে। ওই সংগঠনের নামে নদী থেকে চাঁদা আদায় করা হয়।
সম্প্রতি এর বিরোধিতা করে সেলিম আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি পক্ষ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি উভয় পক্ষই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একে অপরকে বিষোদ্‌গার করে। এ নিয়ে গতকাল রাতে দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে শহরের জালালিয়া মাদ্রাসার সামনে দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে নিজেরাও আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের গুলিতে আহত হন ভ্যানচালক শাহাবুদ্দিন। পরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। শাহাবুদ্দিন কাউন্সিলরের পক্ষের লোক ছিলেন।

সংঘর্ষ চলাকালে ওসি মোস্তফা কামালসহ আট পুলিশ সদস্য আহত হন। এর মধ্যে ওসিসহ তিনজনের গায়ে ছররা গুলি লেগেছে। ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসাধীন। সব মিলিয়ে আহত হয়েছে ৩০ জন। আহত ব্যক্তিদের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রাতে এবং আজ বুধবার সকালে পুলিশ ২৮ জনকে আটক করেছে।

এ ঘটনার বিষয়ে ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহীন চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। ছাতক চুনাপাথর আমদানি ও সরবরাহ সমিতির সভাপতি সেলিম আহমদ চৌধুরীর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সুনামগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, মূলত আধিপত্য বিস্তার ও নদীতে চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটেছে। এতে এক পক্ষের গুলিতে শাহাবুদ্দিন নামের একজন মারা গেছেন। ঘটনায় থানার ওসিসহ আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ এ পর্যন্ত ২৮ জনকে আটক করেছে। থানায় এ ঘটনায় দুটি মামলা হবে। একটি করবে পুলিশ, অন্যটি নিহত ব্যক্তির পরিবার। মামলা প্রক্রিয়াধীন।