খসে পড়ছে লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদের পলেস্তারা, আতঙ্কে রোগীরা

ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় আতঙ্কে রোগীরা বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। লোহাগাড়া, নড়াইল, ১৫ মে। ছবি: প্রথম আলো
ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় আতঙ্কে রোগীরা বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। লোহাগাড়া, নড়াইল, ১৫ মে। ছবি: প্রথম আলো

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক রোগী ভয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আজ বুধবার এই ঘটনা ঘটে।

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ার এটাই প্রথম ঘটনা নয়। রোগী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার এই হাসপাতালের ছাদ থেকে একবার পলেস্তারা খসে পড়েছিল। এ অবস্থায় ভয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন রোগীরা। অন্যদিকে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রোগীদের হাসপাতাল ছাড়তে অনুরোধ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

আজ বুধবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনাটি ঘটেছে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। দুইতলা মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ড ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড। ইতিমধ্যে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে গেছে। এ ছাড়া, ওই দুই ওয়ার্ড, মহিলা ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ডসহ মূল ভবনের অন্যান্য কক্ষের ছাদ, দেয়াল ও বিমে ফাটল দেখা দিয়েছে। এসব ফাটলের কারণে অনেক বিম নিচের দিকে ঝুঁকে এসেছে। এ অবস্থায় আতঙ্ক বিরাজ করছে রোগী, তাঁদের স্বজন, চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে। ভয়ে কয়েকজন রোগীকে হাসপাতাল ছাড়তে দেখা গেছে। ওয়ার্ড ছেড়ে কেউ কেউ নতুন ভবনের বারান্দায় বা সিঁড়ির পাশে বিছানা পেতে আছেন।

হাসপাতালের নার্স তত্ত্বাবধায়ক রাজিয়া খানম বলেন, এর আগে যেসব দেয়াল ও বিমে ফাটল ছিল না, সেগুলোতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে বড় বড় ফাটল দেখা যাচ্ছে।

ছাদের ফাটল ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ভবন। লোহাগড়া, নড়াইল, ১৫ মে। ছবি: প্রথম আলো
ছাদের ফাটল ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ভবন। লোহাগড়া, নড়াইল, ১৫ মে। ছবি: প্রথম আলো

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ার সময় ওই ওয়ার্ডে অবস্থান করছিলেন রত্না বেগম ও মুনিয়া খানম। তাদের দুজনের কোলে ছিল ১১ মাস ও ১৬ মাস বয়সী ডায়রিয়া-আক্রান্ত শিশু। বর্তমানে ভয়ে তাঁরা হাসপাতাল ছেড়েছেন। হাসপাতাল থেকে যাওয়ার সময় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাদ ভাঙে পড়ার সুমায় মনে হচ্ছিল এই বুঝি মরলাম। বাচ্চা নিয়ে দৌড় দিয়ে বাইরে গিছিলাম। যে অবস্থা, এহেনে থাকে মরব নাকি ?’

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত সোমবার পলেস্তারা ভেঙে পড়ার পর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এইচইডি) যশোর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী শামসুল আলম, সহকারী প্রকৌশলী তানজিলা ফেরদৌসী ও উপসহকারী প্রকৌশলী মুক্তি বিশ্বাস মঙ্গলবার দুপুরে পরিদর্শন করেন। বড় ধরনের ভবন ধসের আশঙ্কায় তাঁরা পুরুষ ওয়ার্ড ব্যবহার না করার জন্য সুপারিশ করেছেন। ভবনের অন্যান্য কক্ষও ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক থাকতে বলেছেন। এরপর আজ বুধবার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ছাদের এ ঘটনা ঘটে।

চিকিৎসকেরা বলেন, ১৯৬৮ সালে মূল ভবনটি নির্মাণ হয়েছিল। এত দিন এ ভবনেই ৩১ শয্যার হাসপাতাল ছিল। এরপর, ২০১৪ সালে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯ শয্যার একটি নতুন তিনতলা আধুনিক ভবন নির্মাণ করে হাসপাতালটি মোট ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, ‘স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের সুপারিশ অনুযায়ী পুরুষ ওয়ার্ডের রোগীদের নতুন তিনতলা ভবনে স্থানান্তর করা হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য ওয়ার্ডের রোগীদের মূল ভবন থেকে সরিয়ে অন্যত্র রাখার ব্যবস্থা নেই। তাই এসব ওয়ার্ডের গুরুতর রোগী ছাড়া অন্যান্য রোগীদের হাসপাতাল ছাড়তে অনুরোধ করা হচ্ছে। দ্রুত নতুন ভবন দরকার, না হলে এ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবায় বড় বিপর্যয় ঘটবে।’

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এইচইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী শামসুল আলম প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ভবন মেরামত করে লাভ হবে না। কারণ রড, ইট ও সিমেন্টের কার্যক্ষমতা কমে গেছে। নতুন ভবনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে আবেদন করতে হবে।’