ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ চাই: মেনন

ডেইলি স্টার ভবনে আজ অনুষ্ঠিত ‘আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনাসভা। ছবি: সংগৃহীত
ডেইলি স্টার ভবনে আজ অনুষ্ঠিত ‘আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনাসভা। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের জন্য বাজেট বরাদ্দ সুনির্দিষ্ট করা এবং প্রয়োজনীয় জায়গায় বাজেট বাড়ানোর দাবি করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেছেন, সমতলে বাস করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। তারা উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। তাই সমতলের নৃগোষ্ঠীর জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি করেন তিনি।

রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বাজেট বিষয়ক গোল টেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব দাবি করেন মেনন। ঢাকার ডেইলি স্টার ভবনে ‘আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয় আজ বুধবার। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশন ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এ গোলটেবিলের আয়োজন করে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এখন জাতীয় দারিদ্র্যসীমার হার ২১ শতাংশে। আর চরম দারিদ্র্যসীমার হার ১১ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। কিন্তু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দারিদ্র্যসীমা যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬৫ শতাংশ এবং সমতলে ৮০ শতাংশ হয় তাহলে তাদের মাঝ থেকে দারিদ্র্য মোচন কর্মসূচিকে আগে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দেশের জাতীয় গড় আয় বাড়লেও প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের আয় এখনো বাড়েনি। একই দেশে অসম উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। মেনন বলেন, আগে বাজেট বক্তৃতায় একটি প্যারা বা পাঁচ লাইন লেখা ছিল কিন্তু গত বছরের বাজেটগুলোতে আদিবাসীদের নিয়ে একটি লাইনও লেখা নেই যা দুঃখজনক।

রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, ‘পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর ভাতৃঘাতী সংঘাতের সুযোগ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। তাই পাহাড়িদের ঐক্য ও সংগ্রামকে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে আদিবাসী-বাঙালি একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা সমাধানে সেখানে ভূমি কমিশন গঠন করা হলো, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন সংশোধন করা হলো। কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হলো কিন্তু তবুও ভূমি কমিশন কাজ করতে পারছে না।

আলোচনায় প্রধান বক্তা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ন্যায়সংগতভাবে বাজেটে যা প্রাপ্য তা পাচ্ছে না। তিনি বলেন, চলতি বাজেটে একজনের পেছনে গড়ে মাথাপিছু ব্যয় ধরা হয়েছে সাতাশ থেকে উনত্রিশ হাজার টাকা। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যে বাজেট আছে তাতে মাথাপিছু গড়ে ব্যয় হচ্ছে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা করে।

এম এম আকাশ বলেন, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য বাজেট কত তা বের করতে হলে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ে তাদের শাখা থাকতে হবে। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাথাপিছু ব্যয় বাজেটে কত রাখা হয় তা নির্ধারণ করা যাবে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা শুধু দরিদ্র না তারা সবদিক থেকে প্রান্তিকীকরণের শিকার। আমাদের দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার কিন্তু মানবিক উন্নয়নে আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। আলোচনায় আর অংশ নেন সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা, হরেন্দ্রনাথ সিং, শান্তিবিজয় চাকমা, সেকান্দার আলী, তামলিমন বাড়ৈ, সুভাষ হেমব্রম, শশাঙ্ক রিছিল, মাহবুব আলম, সিফাত রৌফ, মংমংসিং, এভিলিনা চাকমা প্রমুখ।

গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা সোহেল হাজং ও খোকন সুইটেন মুরমু। প্রবন্ধে বলা হয়, গত অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৩০৯ কোটি টাকা। আর সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বাজেট বরাদ্দের জন্য কোনো একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর এখনো নেই। তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে “বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)” নামে একটি কর্মসূচিতে যে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয় তা অতি নগণ্য। চলতি অর্থবছরে এ থোক বরাদ্দের পরিমাণ ছিল মাত্র ৪০ কোটি টাকা। তাতে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২০ লাখ মানুষের জন্য মাথাপিছু ব্যয় পড়ে মাত্র ২০০ টাকা।