বিএনপি এ সরকারকে বৈধতা দিয়েছে: অলি আহমদ

অলি আহমদ
অলি আহমদ

বিএনপির সংসদে যাওয়া ভুল সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদ। তিনি বলেন, ‘বিএনপি সংসদে গেছে, এটাই হলো বাস্তবতা। বিএনপি সংসদে গিয়ে এ সরকারকে বৈধতা দিয়েছে, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’ বুধবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এলডিপি আয়োজিত ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় অলি আহমদ এ কথা বলেন।

আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ অংশ নেন।

বিএনপির উদ্দেশে অলি আহমদ বলেন, ‘বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে জেলে থেকে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া সম্ভব নয়। তারেক রহমানের পক্ষে লন্ডন থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকাও সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।’

সাবেক এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিএনপির নেতাদের অনুরোধ করব, আপনারা নেতৃত্ব দেন। তা না হলে আমাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। এক জায়গায় একত্র হোন। আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন। তা না হলে আপনাদের হাত শক্তিশালী করার জন্য আমাদের বলেন, আমরা সেটা করতে রাজি। বসে থাকলে চলবে না।’

অ​লি আহমদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিতে গিয়েও পারিনি। এবার স্বৈরশাসকের হাতে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। বিএনপির যাঁরা আছেন, আপনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন। কারা কারা আসবেন আমাদের সঙ্গে, আসুন।’

গোলটেবিল আলোচনায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন করে দেখলাম। এরা দিনের বেলায় নির্বাচন করে না। কারণ তারা দিনের আলোতে ভয় পায়, রাতের অন্ধকারে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। তারা নিশাচর, তাই আমাদেরও মশাল হাতে নিয়ে বের হতে হবে। নিশাচরদের তালাশ করে বের করতে হবে।’

জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ারের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৭১ সালে দেশবিরোধী ভূমিকার জন্য জামায়াতকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে বলেন। জাফরুল্লাহ বলেন, ‘২০ দলের অন্যতম শরিক দল হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। তারা যদি সত্যিকার অর্থে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়, তাহলে তাদের জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদের পিতারা যে ভুল করেছেন, তার জন্য বর্তমানে যারা আছে তাদের জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়া যুক্তিসংগত। কারণ তাদেরও রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে।’

গোলাম পরওয়ার এর কোনো জবাব দেননি। তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটকে জনগণের অনুভূতি বুঝে কৌশল নেওয়ার আহ্বান জানান। পরওয়ার বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট বলি আর ২০ দল বলি, আমাদের সবাইকে কৌশলের বিষয়ে স্পষ্ট হতে হবে। জনগণের সঙ্গে আমরা রাজনীতি করি, কিন্তু তাদের সেন্টিমেন্ট যদি না বুঝি, সেটাকে মানুষ কোনোভাবেই কৌশল হিসেবে নেয় না।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন আলাপ যেটা মিডিয়ায় এসেছে, সেটা প্রমাণ করে সাবেক প্রধান বিচারপতির বিদায় এবং বাংলাদেশের আদালত অঙ্গনে যা কিছু ঘটে যাচ্ছে বেগম জিয়া আদালতের কাছে আটকে যাননি, তিনি ফ্যাসিবাদের জিঞ্জিরায় আবদ্ধ হয়ে আছেন।’

মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে কল্যাণ পাটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন মানে পাঁচ বছরের মাঝামাঝি হবে, এমন কোনো কথা নেই। এটা একটি রাজনৈতিক শব্দ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, যেদিনই আমরা আদায় করতে পারি, সেদিনই আমরা নির্বাচন চাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন চাই।’

২০-দলীয় জোটকে কার্যকর করার তাগিদ দিয়ে ইবরাহিম বলেন, ‘এই মুহূর্তে ২০-দলীয় জোট কার্যকারিতার স্তর থেকে নিচে আছে। এটাকে অ্যাফেক্টিভ করা হবে কি হবে না, জানি না। কবে হবে বা হবে না তার জন্য আমরা বসে থাকতে পারি না।’

গোলটেবিল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনি, বিএনপির নেতা আবু নাসের মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, নিলুফার চৌধুরী মনি বক্তব্য দেন।