প্রিয়াঙ্কার কাছে গ্রেড শিট পাঠানো গেল না

প্রিয়াঙ্কা মজুমদার
প্রিয়াঙ্কা মজুমদার

‘প্রিয়াঙ্কা মজুমদার তোমাদের এমএসএস (স্নাতকোত্তর শ্রেণি) পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তোমার সহপাঠী বন্ধুরা হাসিমুখে হল থেকে তাদের গ্রেড শিট নিয়ে যাচ্ছে। তোমার গ্রেড শিট কেউ নেবে কি না জানি না। না ফেরার দেশে গ্রেড শিট পাঠানো গেলে আমি তোমাকে পাঠাতাম।’ হারিয়ে যাওয়া ছাত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া এই আবেগঘন স্ট্যাটাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের।

গতকাল বুধবার রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের এমএসএস ২০১৭–এর ফল প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু ছয় মাস আগে মারা যাওয়ায় প্রিয়াঙ্কার সেই ফল দেখা হয়নি।

২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর যমজ সন্তানের জন্ম দেন প্রিয়াঙ্কা। এর দুদিন পর ১৯ নভেম্বর রাতে অতিরিক্ত রক্তকরণে মৃত্যু হয় তাঁর। এর আগে স্নাতকোত্তর শ্রেণির নয়টি পরীক্ষার মধ্যে আটটিতে অংশ নিতে পেরেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর দিন ছিল শেষ পরীক্ষা। সেই পরীক্ষাটি দিতে না পারায় পরীক্ষা কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারকে ফোন করেছিলেন তিনি। অসুস্থতার কারণে পরীক্ষা দিতে না পারায় মন খারাপের কথা জানিয়েছিলেন শিক্ষককে।

প্রিয় ছাত্রীর নানা স্মৃতি পোড়াচ্ছে মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারকে। গতকাল সন্ধ্যায় ‘প্রিয়াঙ্কা মজুমদারের জন্য কষ্ট’—শিরোনামে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেখেন, ‘ট্যাবুলেশন সিটে তোমার নম্বর তোলার সময় আমি বড়ই কষ্ট পেয়েছি। হৃদয়ে বারবার ভেসে উঠেছে তোমার মিষ্টি মুখের ছবি। যেখানেই থাকো প্রিয়াঙ্কা মামনি, ভালো থেকো।’ তাঁর সেই স্ট্যাটাসটি অনেকেই শেয়ার করেছেন। মন্তব্যের ঘরে কষ্টের কথা জানিয়েছেন কেউ কেউ।

মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘বাচ্চার জন্মের পরেই সে আমাকে ফোন করেছিল। আমি তাকে কোনো চিন্তা না করতে বলি। কিন্তু হঠাৎ খবর আসে—প্রিয়াঙ্কা আর নেই। সে খুব ভালো ছাত্রী ছিল। তার মৃত্যু এখনো কষ্ট দেয়।’

একটা পরীক্ষা দিতে না পারায় প্রিয়াঙ্কার চূড়ান্ত ফল বের হয়নি। তবে যে আটটি পরীক্ষা দিয়েছেন তাঁতে তিনি বেশ ভালো ফল করেছেন। চারটিতেই পেয়েছেন ‘এ মাইনাস’। তাই মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, গর্ভকালীন কষ্টের মধ্যে পরীক্ষা দিয়েও সে খুব ভালো ফল করেছে। সব পরীক্ষা দিতে পারলে সে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতো।

প্রিয়াঙ্কার বন্ধুরা জানান, তাঁর যমজ সন্তানের মধ্যে একটি ছেলে ও অন্যটি মেয়ে। দুই শিশু বর্তমানে আত্মীয়দের স্নেহ-মমতায় বড় হচ্ছে। গতকাল রাতে প্রিয়াঙ্কার বন্ধু জাহেদুল ইসলাম বলেন, যেকোনো প্রয়োজনেই ফোন করতেন প্রিয়াঙ্কা। ফল প্রকাশের পর হয়তো আজও তাঁর ফোন আসত। কিন্তু সেই ফোনটা আর এল না।