বাণিজ্যিক সম্প্রচারে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

গত বছরের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে উৎক্ষেপণের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।
গত বছরের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে উৎক্ষেপণের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।

উৎক্ষেপণের এক বছর পর বাণিজ্যিক সম্প্রচারে যাচ্ছে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। স্যাটেলাইটটির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দেশের সরকারি ও বেসরকারি ৩১টি টেলিভিশন।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ২০১৮ সালের ১১ মে বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে উৎক্ষেপণ করা হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইটটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। উৎক্ষেপণের ছয় মাস পর ফ্রান্সের এই প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে স্যাটেলাইটটির দায়িত্ব বুঝে নেয় রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানি বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)।

বিসিএসসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এক বছর পূর্তি উপলক্ষে নিরাপদ ব্যাংকিং সেবা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের মাধ্যমে ১৯ মে এই সেবা চালু হবে। একই দিনে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ‘ডাইরেক্ট টু হোম’ (ডিটিএইচ) সেবা চালু হবে। এতে কেব্ল ছাড়াই অ্যানটেনার মাধ্যমে টেলিভিশন দেখা যাবে। এ ছাড়া সরকারের পরিকল্পনায় আছে, হাতিয়া দ্বীপের ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। সেখানে টেলি-মেডিসিন ও টেলি-এডুকেশন সেবার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা রয়েছে। নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হতে বাংলাদেশের ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা খরচ হয়। তবে এখনো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সরকারের আয়ের খাতায় নাম লেখাতে পারেনি।

বিসিএসসিএলের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে কোনো টাকা পায়নি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বাণিজ্যিক সম্প্রচারেও প্রথম তিন মাস বিনা মূল্যে সেবা দিতে হবে। এ সময় কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করা হবে।’ তিনি বলেন, স্যাটেলাইটের সঙ্গে ৩১টি বেসরকারি টেলিভিশনের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথ সেবা। বাণিজ্যিক সম্প্রচারের প্রথম তিন মাস পর প্রতিটি টিভি চ্যানেল থেকে মাসিক ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করা যাবে বলে তিনি আশা করেন।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ড। কারিগরি দিকগুলো সমন্বয় করতে গত ২৯ জানুয়ারি বিসিএসসিএল, অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো), বাংলাদেশ ব্রডকাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি কয়েকটি সভা করে স্যাটেলাইট, টেলিভিশন চ্যানেল এবং গ্রাউন্ড স্টেশনের যোগাযোগের সমাধানে করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়।

অ্যাটকোর সহসভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু প্রথম আলোকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের জাতীয় স্যাটেলাইট। এটাতে যুক্ত হওয়ার জন্য আমরা শুরু থেকেই উদগ্রিব। স্যাটেলাইট হস্তান্তরের প্রক্রিয়া, চ্যানেলগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তিগত সংগতি মেলাতে সময় লেগেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আধুনিক ইনস্যাট সি-ব্যান্ড প্রযুক্তির। আর দেশের টিভি চ্যানেলগুলো চলছে ৮ থেকে ১০ বছরের পুরোনো সি-ব্যান্ড প্রযুক্তিতে। টিভি চ্যানেলগুলোর পক্ষে তো ইনস্যাট সি-ব্যান্ডের যন্ত্রপাতি কিনে আপগ্রেড করা সম্ভব নয়।

গত বছরের নভেম্বরে দেশের নয়টি টেলিভিশন চ্যানেল ও একটি ক্যাব্ল অপারেটর পরীক্ষামূলকভাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে যাওয়া তিনটি টিভি চ্যানেল জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে তারা বেশ শক্তিশালী ও ভালো মানের সিগন্যাল পেয়েছে।

পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে যুক্ত ছিল ডিবিসি চ্যানেল। চ্যানেলটি বর্তমানে হংকংভিত্তিক স্যাটেলাইট অ্যাপস্টার ব্যবহার করে সম্প্রচার করছে। এতে চ্যানেলটির বছরে প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। ডিবিসি চ্যানেলের সম্প্রচার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ ব্রডকাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হামিদ উল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দিয়ে ট্রান্সমিশনের পর সিগন্যালের শক্তি ও মান নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। স্যাটেলাইটটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা গেলে প্রচুর টাকা দেশেই থাকবে, যা বিদেশি স্যাটেলাইটকে দিতে হয়। তবে কেব্ল অপারেটর পর্যায়ে বিতরণ নিশ্চিত করতে স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠানকে জোর দিতে হবে।