ভৈরবে 'মানবতার দেওয়াল'

ভৈরবে ‘মানবতার দেওয়াল’।  প্রথম আলো
ভৈরবে ‘মানবতার দেওয়াল’। প্রথম আলো

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক গেছে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড স্পর্শ করে। ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের শেষ গন্তব্যও এই স্ট্যান্ড। দুটি মহাসড়কের স্পর্শ পাওয়ায় ভৈরব বাসস্ট্যান্ড মানুষের পদচারণে দিনরাত থাকে মুখর। হাজারো মানুষের উপস্থিতির মধ্যে ছিন্নমূল মানুষের আনাগোনাও কম নয়। তাঁদের অনেকের শরীরে পোশাক নেই। আবার অনেকে ছেঁড়া পোশাক পরে জীবন টেনে নেয়। পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই—এমন সব মানুষের সাহায্যে হাত বাড়ানোর ভাবনা থেকে ভৈরবের এক খণ্ড দেয়াল বেছে নেওয়া হয়েছে। আকারে এক খণ্ড হলেও দেয়ালটি মানবতায় ভরপুর। তাই দেয়ালটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মানবতার দেয়াল’। মানবতার এ দেয়ালের অবস্থান বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া আল মদিনা নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিপরীতে।

এই দেয়ালে ঝোলানো আছে বেশ কিছু হুক। যাঁদের অতিরিক্ত কাপড় আছে কিংবা কাপড়টি আর ব্যবহার করবেন না, অনেকে সেই কাপড়টি এনে ওই হুকে ঝুলিয়ে যান। আর যাঁদের বস্ত্র প্রয়োজন তাঁরা এসে এই দেয়াল থেকে প্রয়োজনীয় কাপড়টি নিয়ে যান। এই হলো মানবতার দেয়ালের বৈশিষ্ট্য।

প্রথমে দেয়ালটির প্রতিষ্ঠার ভাবনা আসে পৌর শহরের কমলপুর এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সিরাজীর মাথায়। পরে তাঁর এ কাজে এলাকার তরুণসহ সব বয়সী মানুষ যুক্ত হয়। স্থানীয় লোকজন এখন প্রতিদিন শতাধিক পোশাক রেখে যাচ্ছেন। আবার সন্ধ্যার মধ্যেই বেশির ভাগ পোশাক নিয়ে যাচ্ছেন হতদরিদ্র লোকজন।

পৌর শহরের কমলপুর মহল্লার মহিউদ্দিন মিয়া গত মঙ্গলবার একটি পাঞ্জাবি হাতে আসেন মানবতার দেয়ালে। তিনি বলেন, ‘মানবতার দেয়ালের কথা শুনেছি। এ জন্য মনে হয়েছে আমিও একটা কাপড় রাখি। যদি কেউ পরে উপকৃত হয়, সেটাই আনন্দ।’

একটি পোশাক প্রয়োজন এক তরুণের। এল মানবতার দেয়ালে। পাঞ্জাবি পছন্দ হলো তাঁর। তরুণটির নাম হারুন মিয়া। অসুস্থতার জন্য কাজ করতে পারেন না। বেকার। পাঞ্জাবিটি গায়ে দিয়ে হারুন বললেন, নামাজ পড়ার জন্য তাঁর একটি পাঞ্জাবির প্রয়োজন ছিল।

পোশাক দেননি কিংবা নেননি—এমন অনেকে এসে মানবতার দেয়ালের সামনে কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকেন। আসা–যাওয়ার পথে মানবতার দেয়াল নামটি চোখে পড়লে অনেক পথচারী থমকে দাঁড়ান কিছু সময়ের জন্য।

আয়োজকদের আশা, উদ্যোগটি ছোট হলেও এই দেয়ালের মাধ্যমে একসময় মানবতা ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র। উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ব্যবসা বাসস্ট্যান্ডে। অনেক ধরনের মানুষ দেখি। ধনী মানুষ। গরিব মানুষ। অনেকে হাত পাতেন। কাপড় চান। মনে হলো একটি দেয়াল করা গেলে কিছু মানুষের সুবিধা হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো সমবেতভাবে একটি ভালো কাজ করা গেল। আমার ধারণা, এ উদ্যোগটির মাধ্যমে আমাদের সুপ্ত বিবেক জেগে উঠবে।’