কেটে নেওয়া পা উদ্ধার হয়নি

হাসপাতালে চিকিৎসার সময় কালা মিয়া।  ছবি: প্রথম আলো
হাসপাতালে চিকিৎসার সময় কালা মিয়া। ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কালা মিয়া নামের এক ব্যক্তির ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ কুপিয়ে কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার ২৭ দিন পার হয়েছে। এর মধ্যেও কর্তিত সেই অংশ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে আসামিপক্ষের লোকজনের হুমকিতে কালা মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা গ্রামছাড়া বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

২৫ এপ্রিল ঢাকার সানারপাড় থেকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি আবুল বাশার, তাঁর বড় ভাই মনির হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে ধন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ৩০ এপ্রিল বাঞ্ছারামপুর থানা-পুলিশ থেকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার করা তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে রিমান্ডের আবেদন করে পিবিআই। আদালত আবুল বাশার, তাঁর বড় ভাই মনির হোসেন ও দেলোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআইকে এক দিনের সময় দেন। ৫ মে রিমান্ডে নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাননি পিবিআই কর্মকর্তারা। পরবর্তী সময়ে ফারুক মিয়া নামে এই মামলার আরেক আসামিকে কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তাঁর কাছ থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশ জানায়, ২৫ এপ্রিল বেলা তিনটার দিকে উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নের কান্দাপাড়া এলাকা থেকে মামলার ৮ নম্বর আসামি ফারুক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৬ এপ্রিল মামলার ৭ নম্বর আসামি শামীম মিয়াকে কুমিল্লা দাউদকান্দির গৌরীপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ২৭ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি কালা মিয়ার পায়ের কাটা অংশ উপজেলার রূপশদী ইউনিয়নের রূপশদী গ্রামের কান্দাপাড়ায় একটি পরিত্যক্ত জমিতে রেখে দিয়েছিলেন। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। কিন্তু সেখানে কালা মিয়ার পায়ের কর্তিত অংশ পাওয়া যায়নি।

১৯ এপ্রিল বিকেলে আবুল বাশার ও তাঁর লোকজন রূপসদী গ্রামের কান্দাপাড়া এলাকায় কালা মিয়া ও তাঁর ছেলে বিপ্লব মিয়ার ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে কালা মিয়ার ডান পায়ের ঊরুতে টেঁটাবিদ্ধ করা হয়। আর বিপ্লবকে ডান হাতের কনুইয়ের নিচে দুটি টেঁটাবিদ্ধ করা হয়। হামলাকারীরা একপর্যায়ে কালা মিয়ার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। শামীম সেই বিচ্ছিন্ন অংশ নিয়ে ঘটনাস্থলে থেকে চলে যান। পরে কাল মিয়া ও তাঁর ছেলেকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনার পরপর আবুল বাশারকে প্রধানসহ ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন কালা মিয়ার স্ত্রী সালমা আক্তার। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়। ২২ এপ্রিল বাশারকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

কালা মিয়ার সঙ্গে কয়েক মাস ধরে আবুল বাশারের বিরোধ চলে আসছিল। একটি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে কেরোসিন–পেট্রল ঢেলে কালা মিয়ার বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেন আবুল বাশার ও তাঁর লোকজন। এ ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি আবুল বাশারসহ ১৮ জনকে আসামি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন সালমা আক্তার। গ্রেপ্তার করা ফারুক মিয়াকেও আসামি করা হয়। সেখান থেকে তাঁদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।

বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মামলার পাঁচ আসামিকে বাঞ্ছারামপুর থানা-পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।’

পিবিআই পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান সরকার বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদেও কালা মিয়ার কেটে নেওয়া পায়ের অংশ সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি আসামিরা।