সড়ক তো নয়, যেন চষা জমি

জল-কাদায় একাকার সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। গত মঙ্গলবার বিকেলে তামাবিল এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
জল-কাদায় একাকার সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। গত মঙ্গলবার বিকেলে তামাবিল এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সড়কের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে বড় বড় গর্ত। তাতে কাদাপানিতে একাকার। দেখে মনে হয় বীজ রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে কোনো রকমে হেলেদুলে চলছে যানবাহন।

১০ বছর ধরে সিলেট-তামাবিল-জাফলং জাতীয় মহাসড়ক এমন বেহাল। এ কারণে প্রতিদিন দুর্ভোগ সহ্য করেই যাত্রী ও চালকদের এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের একটি অংশ হচ্ছে সিলেট-তামাবিল-জাফলং সড়ক। ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট-জাফলং সড়কের জৈন্তাপুর থেকে জাফলং পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার অংশের মধ্যে কয়েক কিলোমিটার ছাড়া পুরোটাই বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সড়কের পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দাকে।

জাফলং এলাকার দুজন বাসিন্দা বলেন, তামাবিল স্থলবন্দর, পর্যটনকেন্দ্র জাফলং এবং পিয়াইন নদে অবস্থিত পাথর কোয়ারিতে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। ফলে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি প্রতিদিনই কয়েক হাজার ট্রাকও এ সড়কে চলাচল করে। প্রচুরসংখ্যক পর্যটক আর ব্যবসায়ীদের চলাচলের পথ হওয়ায় সড়কটি এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।

গত মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের জৈন্তাপুরের পার্শ্ববর্তী অংশে ইট-সুরকি ফেলে সড়কটি মেরামতের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। এরপরের ৪ নম্বর বাংলাবাজার, আলুবাগান, নলজুরি, তামাবিল, গুচ্ছগ্রাম, মোহাম্মদপুর, মামারবাজার, বল্লাঘাট অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায় পুরো এলাকার পিচঢালাই উঠে গেছে। সড়কটি যে কোনোকালে পাকা ছিল, সেটা বোঝার কোনো চিহ্ন নেই। বিশেষত নলজুরি, তামাবিল ও মামারবাজার অংশ যান চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। এ সময় নলজুরি এলাকায় একটি ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ট্রাক ও সিএনজিচালকেরা বলছেন, গভীর খানাখন্দে পড়ে এবং প্রচণ্ড ঝাঁকুনির কারণে প্রায়ই গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে যায়। বিকল্প না থাকায় এই এবড়োখেবড়ো সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে পাথর ও কয়লাবাহী কয়েক হাজার ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস। স্থানে স্থানে সৃষ্ট গর্তগুলো একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। একটু এদিক-সেদিক হলেই যানবাহন উল্টে পড়ে ঘটে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যানবাহন ধীরগতিতে চলায় সময়ও লাগে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি।

তামাবিল এলাকার বাসিন্দা মো. মনিরুল ইসলাম (৩২) ও সাইদুল ইসলাম (২৬) বলেন, এ সড়ক দিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগী, নারী ও শিশুদের। অনেক সুস্থ মানুষও প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জাতীয় মহাসড়ক হওয়া সত্ত্বেও দিনের পর দিন এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। ১০ বছর ধরে সড়কটি জরুরি সংস্কারের অভাবে প্রায় চষা জমিতে পরিণত হয়েছে।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, এমনিতেই সড়কটি বড় বড় খানাখন্দে ভরে গেছে। এর মধ্যে প্রতিদিন মালবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে খানাখন্দগুলো বৃহৎ আকারে পরিণত হচ্ছে। একেকটি খানাখন্দ রীতিমতো ছোটখাটো ডোবায় রূপ পেয়েছে। গুচ্ছগ্রাম জাফলং ভিউ এলাকার ব্যবসায়ী ওমর সানি বলেন, ‘বৃষ্টিপাতের মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় এখন সড়কে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। আর শুষ্ক মৌসুমে একই অংশে সারাক্ষণ ধুলা ওড়ে। কেবল এই বিধ্বস্ত সড়কের কারণে অনেক পর্যটক এখন জাফলং আসতে চান না। এ কারণে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেও একধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জানিয়েছে, সিলেট-জাফলং সড়কটি পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে হরিপুর, শুক্কুরবাড়ি বাজার, জৈন্তাপুরসহ সড়কের বিভিন্ন অংশের কাজ শেষ হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সড়ক নির্মাণের পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগে অথবা মধ্যেই কাজ শেষ হবে। সড়কটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২৪ কোটি টাকা।

সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, ‘তামাবিলসহ দু-একটি স্থান কিছুটা বেহাল। তবে সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের পুনর্নির্মাণ কাজ যেন দ্রুততার সঙ্গে শেষ হয়, সেদিকে আমাদের পূর্ণ নজরদারি রয়েছে।’